আগেই বলেছিলাম যে, ২০ রান কম হয়েছে বাংলাদেশের। যে উইকেট ছিল, এ উইকেটে স্পিনারদের জন্য অতটা হেল্প ছিল না। এ কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, ১৫-২০টা রান কম হয়েছে। গতকালই বলেছিলাম, বেঙ্গালুরুর এই উইকেটে বল খুব ফ্লাই করে। মারলেই রান হয়। তো এমন উইকেটে যে বাংলাদেশের অন্তত ২০টা রান কম হয়েছে এটা এখন বলাই যায়।আর আমার কাছে মনে হয়েছে ফিল্ডিংটা খুব বাজে হয়েছে। উইকেটটাও মনে হয়েছে, এখানে যদি একটু স্পিন থাকতো, তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। উইকেটে স্পিন ছিল না। যে কারণে আমাদের বোলারদের সামনে ওদেরকে খুব বেশি পরিশ্রমও করতে হয়নি। যদিও ৭ উইকেট পড়ছে ওদের। উইকেটের হেল্প পেলে বোলাররা ম্যাচের ধরন পাল্টেও দিতে পারতো এবং বাংলাদেশের জয়টাও সম্ভব ছিল।অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে আমাদের বোলিং অ্যাটাক ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী। স্পিন বিভাগে সাকলাইন সজিব, শুভাগত হোম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান। অর্থাৎ আমাদের চারটা স্পিনার। যদি উইকেটে একটু হেল্প থাকতো। স্পিন ধরার মতো একটু সহযোগিতা পেতো, যেটা পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড, তাহলে আমাদের বোলারদের জন্য অনেক বেশি সুবিধা হতো।সবচেয়ে বড় কথা উইকেটটা ছিল একদম ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। আমরা এই উইকেট থেকে রান করেছি খুব কম। এই উইকেটে, এই আউটফিল্ডে ১৮০’র বেশি রান করতে না পারলে জেতা খুব মুশকিল। তারওপর দলটির নাম আবার অস্ট্রেলিয়া। তাও শুরুতে ওয়াটসনের ক্যাচটা যদি ধরতে পারতো, ফিল্ডিংগুলো ভালো করতে পারতো, সহজ সহজ বাউন্ডারিগুলো না ছাড়তো এবং শেষ দিকে এসে আল-আমিন হ্যাস্টিংসের ক্যাচটা মিস না করতো এবং মুশফিক যদি রান আউটটা মিস না করতো, তাহলে ম্যাচের চিত্র ভিন্নও হতে পারতো।মোহাম্মদ মিঠুন যে ক্যাচটি মিস করেছিল, ওটা তো ধরার কথা ছিল মাশরাফির। আসলে কেন যে সে ওই ক্যাচটা মিঠুনের হাতে ছেড়ে দিল বুঝতে পারছি না। আজ মাশরাফিকে দেখে মনে হলো পুরো ডাউন। গত দেড়-দুই বছরে যেভাবে তার কাছ থেকে লিডারশিপটা দেখেছি, সেটা আজ একদমই দেখিনি। মানসিকভাবেই যেন খুব ভেঙে পড়েছে সে। পুরো ম্যাচেই দেখলাম তার মাথা ছিল সব সময় নিচু।তাসকিন এবং সানির বিষয়ে মাশরাফি আসলে খুব বেশি আপসেট হয়ে পড়েছে। একজন পেশাদার অধিনায়ক, একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এতটা আপসেট হওয়া আমার মনে হয় ঠিক না। ম্যাচের মধ্যে তার সিদ্ধান্তগুলো কিংবা ফিল্ডিং সেটআপেও কেমন যেন তার সেই আপসেট হওয়ার চাপ। তাসকিনের বিষয়টা আজ তার পারফরম্যান্সে খুব বেশি প্রভাব ফেলেছে। আগের তুলনায় মোটেও ভালো হয়নি।মাশরাফির শরীরী ভাষাতেও পুরো আপসেট হওয়ার চাপ স্পষ্ট ছিল। তার চেহারা যদি খেয়াল করে দেখেন, টস থেকে শুরু করে ম্যাচের শেষে পুরস্কার বিতরণী পর্যন্ত তার চেহারা ছিল মলিন। প্রায় সারাক্ষণই মাথা নিচু করেছিল। মাঠে তৎপরতাও ছিল অন্য ম্যাচগুলো তুলনায় কম। এমন হলে পরের দুটা ম্যাচে আমাদের ভালো করাটা মুশকিল হয়ে যাবে।টসের পরেও দেখলাম মাশরাফিকে খুবই আপসেট দেখাচ্ছে। ম্যাচ শেষে ইন্টারভিউতেও দেখা গেল তাকে একইভাবে। পুরো খেলাতেই ছিল আপসেট। গতকালও তাসকিনের বিষয়টা নিয়ে কান্না করেছে। আসলে আমার মতে, একজন পেশাদার অধিনায়ক এবং খেলোয়াড় হিসেবে এতটা আবেগপ্রবণ হলে সেটা ম্যাচের ওপরও প্রভাব ফেলে। এটা না হলে দলের অন্যরা চাঙ্গা থাকতে পারতো।সে যদি আরও সাহসী থাকতো, তাহলে ম্যাচের চিত্রও বদলে যেতে পারতো। যেমন মিঠুন যে ক্যাচটা মিস করেছে, সেটা তো ছিল মাশরাফিরই ক্যাচ। অন্যসময় হলে দেখা যেতো অন্য কাউকে সুযোগই দিতো না। কল দিতো, মাই ক্যাচ, মাই ক্যাচ বলে। অথচ আজ এতটাই ডাউন ছিল যে, সে ক্যাচটা আরেকজনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। নিজে এ দায়িত্বটা নেয়নি।আসলে আমরা যে মাশরাফিকে চিনি, সেই মাশরাফিকে আজ চোখে লাগেনি। কারণ, ও কিন্তু সবসময়ই এক ওভার খারাপ করলে, পরের ওভারে এসে সেটা পুষিয়ে দেয়। কিন্তু আজ প্রথম ওভার বল করার পর আর বোলিংয়েই আসেনি। খুব একটা যে খারাপ করেছিল তা তো নয়। পরের আর একটা ওভারের জন্যও বল করতে আসেনি।এটা এই প্রথম দেখলাম আমি যে মাশরাফিকে এতটা ডাউন হতে। কারণ, সব সময় আমরা জানি সে একজন ফাইটার। শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে ভালোবাসে। ব্রেক থ্রু দিতে ভালোবাসে; কিন্তু আজকে সে প্রথম ওভার করে আর বোলিংয়ে আসলো না। এ জিনিসটা খুবই চোখে লেগেছে। অর্থাৎ, আজ আমি চিরচেনা সেই ফাইটার মাশরাফিকে দেখিনি। সেই ফাইটার মাশরাফি আজও যদি থাকতো, তাহলে বাংলাদেশের জয় অসম্ভব ছিল না।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক।আইএইচএস/বিএ
Advertisement