ফিচার

শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস

শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন কবি, কথা সাহিত্যিক ও নাট্যকার। ১৯২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার কালীঘাটে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবের ৭ বছর কাটে মামা বাড়িতেই। ছোটবেলায় দুরন্ত ছিলেন, লেখাপড়ায় মন ছিল না। তাই দাদামশাই তাকে শান্তিনিকেতনে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বছর ঘুরতেই দাদু ফিরিয়ে আনলেন।

Advertisement

১৯৩৪ সালে চলে গেলেন পৈতৃক বাড়ি, অবিভক্ত বাংলার তথা অধুনা বাংলাদেশের নড়াইলে। ভর্তি হলেন সেখানকার ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে। তার জ্যাঠামশাই প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি প্রভাব এসে পরে তার লেখাপড়ার। ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশনে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে চলে আসেন কলকাতায়। ভর্তি হন আশুতোষ কলেজে। সেখানে পড়াকালীনই তার ‘জানি জানি আজ আমারে পড়ে না মনে’ লেখা গান মুগ্ধ করেছিল বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামকে।

আশুতোষ কলেজ থেকে আইএ ও পরে বিএ পাস করেন। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। আর্থিক অনটনের কারণে ইন্ডিয়ান কপার কর্পোরেশনে ইনস্পেক্টরের চাকরি নিয়ে চলে যান ঘাটশিলা। সেখানে তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসেন। তার উৎসাহে, প্রেরণায় সেখানকার পরিবেশ তার কলমে এসেছে। এখানে থাকতে বিভূতিভূষণের ভাগ্নি উমা দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়।

১৯৪৫ সালে ‘এম এল ব্যানার্জি অ্যান্ড সন্স’ নামে এক জাহাজ কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে ওয়ালটেয়র চলে যান এবং তার এই যাত্রাও বাংলা সাহিত্যে তৈরি করল নতুন পথ। প্রথম সাগরের হাওয়া এসে লাগল তার সৃষ্ট বাংলা গল্পে। এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। উপ-অধিকর্তা হিসেবে ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

Advertisement

১৭ বছর বয়সে তার প্রথম গল্প ‘বুভুক্ষা’ প্রকাশিত হয় ‘মানসী’ পত্রিকা আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন। গল্পটি পড়ে তিনি মুগ্ধ হয়ে পকেট থেকে নিজের কলমটি বের করে তার হাতে তুলে দেওয়ার সময় বলেছিলেন-‘তোমার জীবনে সুখ আসবে, দুঃখ আসবে, কিন্তু এই কলমটি তুমি ছেড়ো না। মনে রেখো, এই কলমের জন্যই তুমি জন্মেছ’।

তার উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ-অপরিচিতের নাম, অভিমানী আন্দামান, আনন্দ ভৈরবী, উত্তরাধিকার, এ জন্মের ইতিহাস, এই তীর্থ, এক আশ্চর্য মেয়ে, একটি রঙ করা মুখ, কত আলোর সঙ্গ, কর্নাটরাগ, কৃষ্ণপক্ষের আলো, ছায়াসঙ্গিনী, জনপদবধূ, জলকন্যা, ঢেউ ওঠে পড়ে, তারুণ্যের কাল, তীরভূমি, তোমার পতাকা, দুই নদী, দেবকন্যা, দ্বিতীয় অন্তর, নগরনন্দিনীর রূপকথা, নগ্নদ্বীপ, নিধুবাবুর টপ্পা, নীলসিন্ধু, বন্দরে বন্দরে, বিদিশার নিশা ইত্যাদি।

শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বন্দরে বন্দরে’ উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালের ২৬ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

কেএসকে/জিকেএস

Advertisement