জাগো জবস

আন্তর্জাতিক ইয়োগা প্রশিক্ষক হিসেবে তানির পথচলা

তানি বাতেনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঠাকুরগাঁওয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়েই পড়াশোনা করেছেন। এরপর এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঢাকায় চলে আসেন। পরে তিনি ঢাকাতেই ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক ইয়োগা প্রশিক্ষক হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের বৃহত্তম ইয়োগা সংস্থা ‘ইয়োগা অ্যালায়েন্স ইউএসএ’র একজন রেজিস্ট্রার ইয়োগা শিক্ষক। বর্তমানে গুলশানের একটি ইয়োগা সেন্টারে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

Advertisement

ইয়োগা শিক্ষক হিসেবে যাত্রাতানি বাতেন বলেন, ‘আমার দুটি সন্তান আছে। সন্তান হওয়ার পর অনেক মোট হয়ে যাই। সন্তানদের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের যত্ন নেওয়ার সময় পেতাম না। তারপর আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি। চিকিৎসকেরও পরামর্শ নেওয়া শুরু করলাম। অনেকেই অনেক কথা বললেন। কিন্তু তেমন কোনো রেজাল্ট দেখতে পেলাম না।’

একপর্যায়ে তানি ব্যায়াম করা শুরু করেন। এতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ইউটিউব দেখে ইয়োগা শুরু করেন। তখন থেকেই ইয়োগার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তখনই তানি বাতেনের ইয়োগা যাত্রা শুরু হয়। তানির মনে হয়, ইয়োগাই একমাত্র পারফেক্ট সল্যুশন শরীর ফিট রাখার। তাই ইয়োগায় অংশ নেন নিয়মিত।

শিক্ষক হিসেবে পথচলাতানি বাতেন ইয়োগার মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইয়োগা প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ভিয়েতনাম থেকে ৭০০তম ইয়োগা প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়াও ভারতের স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়োগা থেরাপি বিষয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন।

Advertisement

এরপর বিশ্বের বৃহত্তম ইয়োগা সংস্থা ‘ইয়োগা অ্যালায়েন্স ইউএসএ’ থেকে আন্তর্জাতিক প্রত্যয়িত ইয়োগা শিক্ষক হিসেবে রেজিস্ট্রার হন। ইয়োগা প্রশিক্ষক হিসেবে সনদপত্র পান। এর মাধ্যমে প্রায় ১৬০টি দেশে তিনি ইয়োগা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারবেন বলে জানান।

আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজের অভিজ্ঞতাকরোনাকালে তিনি শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক দলে ছিলেন। মূলত ইয়োগা শিক্ষক হিসেবে তার করোনার সময়েই প্রথম ক্লাস নেওয়া। তিনি করোনার সময় থেকে এ পর্যন্ত অনলাইনে বিভিন্ন ব্যাচে বিভিন্ন দেশের ২০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর ক্লাস নিয়েছেন। এখনও নিয়মিত ৪০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন। তানি বাতেন ভিয়েতনামে ২২ দিন ও ভারতে ১২ দিনের ইয়োগা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

পথ চলতে প্রতিবন্ধকতাইয়োগা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ইয়োগা নিয়ে খুব একটা ধারণা নেই। অনেকেই মনে করেন, আমার তো বয়স হয়েছে, আমি ইয়োগা করতে পারব না। অনেকেই ভাবেন, আমি অনেক মোটা, আমি কি ইয়োগা করতে পারব? তাদের একটাই পরামর্শ দিতে চান তিনি, ‘ইয়োগা বয়স বা স্থূলতার ওপর নির্ভর করে না। ইয়োগা সবার জন্য।

অনেকে বলেন, এসব করে হাত-পা ভেঙে যাবে না তো? কিন্তু কিছু মানুষ ইয়োগা করে অনেক উপকৃত হয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত ইয়োগা করছেন এবং ইয়োগা করতে ভালোবাসেন। তানি বাতেন বলেন, ‘আমি অন্য দেশে দেখেছি, ওখানকার নারীরা ইয়োগা নিয়ে খুবই আগ্রহী। তারা নিয়মিত ইয়োগা করতে ভালোবাসেন এবং ইয়োগাকে রোগের ওষুধ হিসেবেও মনে করেন। আমার সঙ্গে অনেক বয়স্ক নারী কাজ করছেন। যাদের বয়স ৫০-৬০ বছর। তাদের অভিজ্ঞতা খুব ভালো।’

Advertisement

পেশা হিসেবে ইয়োগাইয়োগা আমাদের জীবনধারা। ইয়োগা তানির মতো অনেকের জীবন বদলে দিয়েছে। ইয়োগার মাধ্যমে অনেকেই এখন সুস্থ জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশে এখনও তেমন পরিচিতি পায়নি ইয়োগা। তবে দেশের বাইরে ইয়োগার মূল্য অনেক। শিক্ষকদেরও মূল্যায়ন অনেক। তবে ভালোভাবে শুরু করতে পারলে ইয়োগা শিক্ষক পেশা হিসেবে দারুণ।

তানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাদেশের মানুষকে ইয়োগা সম্পর্কে জানাতে হবে। তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে ইয়োগার উপকারিতাসহ নানা দিক তুলে ধরতে চান। তরুণদের ইয়োগা সম্পর্কে উৎসাহিত করতে চান। এজন্য নিজেই খুব শিগগিরই ইয়োগা সেন্টার চালু করবেন। ইয়োগার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হওয়া যায়। বর্তমানে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের অন্যতম উপায় হচ্ছে ইয়োগা। এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

এসইউ/জেআইএম