ফিচার

ভ্যাম্পায়ার ডিজিজ কেন হয়? জেনে নিন লক্ষণ

ভ্যাম্পায়ার ডিজিজ! কি, চমকে গেলেন? নামটা অপরিচিত মনে হচ্ছে? এটি আসলে এক ধরনের কাল্পনিক অশুভ অস্তিত্ব। আমাদের দেশে ভূত-প্রেত নিয়ে আছে নানা উপকথা-রূপকথা। গ্রামে-শহরে আমরা প্রায় সবাই ভূতের গল্প শুনে বড় হয়েছি। তেমনই ইউরোপ, আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য বিশ্বে ভূত-প্রেতের পরিবর্তে ভ্যাম্পায়ার, ওয়্যারউলফ, গবলিন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অশুভ চরিত্রের উপস্থিতিতে বিশ্বাস আছে অনেকের। পাশ্চাত্য ধারণা অনুযায়ী, ভ্যাম্পায়ারের অন্যতম খাবার হলো তাজা রক্ত। দিনের বেলা তারা বের হতে পারেন না। রাতেই তাদের বিচরণকাল।

Advertisement

কিন্তু আসলেই কি বাস্তবে ‘ভ্যাম্পায়ার’ বলে কিছু আছে? ভ্যাম্পায়ার থাকুক বা না থাকুক- এমন একটি রোগ কিন্তু আছে; যা দেখলে মনে হয় যেন এতে আক্রান্ত রোগীই ভ্যাম্পায়ারের বাস্তব রূপ। সমস্যাটি ‘ভ্যাম্পায়ার সিনড্রোম’ নামে পরিচিত। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় ‘পরফাইরিয়া’। এটি মূলত একটি বংশগত জেনেটিক রোগ। বিরল রোগটি গড়ে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের হয়ে থাকে।

পরফাইরিয়া গ্রিক শব্দ; এর উৎপত্তি ‘পরফুরা’ থেকে। যার অর্থ হলো বেগুনি। পরফাইরিয়া মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। কিউটেনিয়াস পরফাইরিয়া দেহের ত্বকের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। আর একিউট পরফাইরিয়া স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিউটেনিয়াস পরফাইরিয়াকেই ‘ভ্যাম্পায়ার সিনড্রোম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারণ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকটা ভ্যাম্পায়ারের মতোই আচরণ করেন। যেমন- সূর্যের আলো সহ্য না হওয়া বা দাঁত ক্রমশ বাদামি হয়ে যাওয়া এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির প্রস্রাবও হতে পারে বাদামি রঙের।

সূর্যের আলোয় গেলে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, হাত, গলা ও কানসহ বেশিরভাগ অংশেই ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। সূর্যের আলোয় গেলে এদের ত্বকে ফোসকাও দেখা যায়। এমনকি শুধু সূর্যের আলোই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে কৃত্রিম আলোয়ও এদের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ত্বকের রং পরিবর্তন হয়ে ত্বক পাতলা হয়ে যায় এবং ফেটে যায়। ত্বকের আক্রান্ত স্থানে লোম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক বৈকল্যেও ভুগতে পারেন।

Advertisement

আমাদের শরীরে রক্তের ‘হিম’ নামক একটি জটিল জৈব পদার্থের উৎপাদনে সমস্যা হওয়াই মূলত এ রোগের প্রধান কারণ। ‘হিম’ হলো আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনে থাকা এমন একটি প্রোটিনজাতীয় পদার্থ, যা ফুসফুস থেকে সারাদেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। আমাদের দেহের রক্তের লাল বর্ণের অন্যতম কারণও এই ‘হিম’ নামক পদার্থে বিদ্যমান লৌহ। মূলত আমাদের যকৃৎ এবং অস্থিমজ্জায় এর উৎপত্তি। ‘হিম’ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম কাজ করে। পরফাইরিন নামক যৌগও এ হিমের গঠনে সাহায্য করে।

কিছু ক্ষেত্রে পরফাইরিনকে হিমে রূপান্তরিত করার জন্য দায়ী এনজাইমের মাত্রা পরিমাণগতভাবে অথবা কার্যকারিতার দিক থেকে অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল হয়। কারণ পরফাইরিয়া রোগে আক্রান্তদের দেহে এ ধরনের এক বা একাধিক এনজাইম উৎপাদনকারী জিনের মিউটেশন ঘটে। ফলে ত্রুটিপূর্ণ এনজাইমের জন্য দেহে অত্যধিক পরিমাণে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে তৈরি হয় পরফাইরিন, যা ধীরে ধীরে ত্বকে কিংবা স্নায়ুতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। শরীরে পরফাইরিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগটিকে পরফাইরিয়া নামে অভিহিত করা হয়।

অন্যান্য জেনেটিক অসুখের মতো এ রোগেরও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। অর্থাৎ এই রোগের শিকার হলে অসহায়ের মতো ঘরে বসে থাকতে হয়। হতে হয় নিশাচর। তবে এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রোগ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে প্রস্রাবে পরফোবিলিনোজেনের মাত্রা এবং রক্তে সিরাম পরফাইরিনের মাত্রা পরিমাপ করা যেতে পারে।

সময়মতো শনাক্ত করা সম্ভব হলে এ রোগের লক্ষণসমূহের তীব্রতা কমানো সম্ভব। ভ্যাম্পায়ার সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে দেহের রক্ত নিয়মিত পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। এতে যকৃতে অতিরিক্ত আয়রনের পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি কলা, ডুমুর, বেদানা ইত্যাদি যেসব খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে; সেসব খাদ্যগ্রহণও নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন পড়তে পারে।

Advertisement

এসইউ/এমএস