ভ্রমণ

বিশ্বের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করা তানভীর অপুর নেশা

তানভীর অপু একজন বিশ্ব পর্যটক। বাংলাদেশের এ কৃতি সন্তান এ পর্যন্ত ৬৮টি দেশের ৭১৫টি শহর ভ্রমণ করেছেন। বর্তমানে বসবাস করছেন ফিনল্যান্ডে। সে দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তিনি। ফিনল্যান্ড থেকেই তার ভ্রমণের আগ্রহ শুরু হয়। ফলে স্থায়ী কোন চাকরি করা সম্ভব হয় না। মন চাইলে আর পকেটে টাকা থাকলেই বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। সম্প্রতি জাগো নিউজকে শুনিয়েছেন তার ভ্রমণের গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

Advertisement

আপনার শৈশব এবং বেড়ে ওঠা নিয়ে কিছু বলুন—তানভীর অপু: আমার জন্ম ১৯৮০ সালে। শৈশব ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। আমরা ২ ভাই ১ বোন। আমার মা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত ছিলেন। বাবা ইব্রাহীম আলী দেওয়ান পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে হকির ওপর পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলেছি। তারপর রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার পর চলে যাই ফিনল্যান্ডে। ফিনল্যান্ডে যাওয়ার পর থেকে মূলত ভ্রমণকে প্রাধান্য দেই। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন কিছু দেখা ও নতুন কিছু জানার জন্যই ভ্রমণ করা। আর এভাবেই আজকের আমির বেড়ে ওঠা।

কবে থেকে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা মাথায় এলো?তানভীর অপু: ফিনল্যান্ড থেকেই মূলত ভ্রমণের নেশা চেপে বসে। পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক স্যারের অনুপ্রেণায় ভ্রমণের প্রতি আগ্রহটা বেড়ে যায়। একমাত্র ভ্রমণই পারে মানুষের জীবনকে গোছাতে এবং নতুন করে সাজাতে। এ জন্যই পর্যটকের ভূমিকায় জীবন বেছে নেওয়া।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কখন প্রথম পা বাড়ালেন ভ্রমণের পথে?তানভীর অপু: ২০০৬ সালে শুরু হয় আমার ভ্রমণযাত্রা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভ্রমণে প্রথম পা দিয়েছিলাম এস্তনিয়া নামে ইস্ট ইউরোপের একটি দেশে। সেখানে জাহাজে করে গিয়েছিলাম।

Advertisement

এ পর্যন্ত কতটি দেশ বা শহর ভ্রমণ করেছেন?তানভীর অপু: ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৮টি দেশের ৭১৫টি শহর ভ্রমণ করেছি।

সাত শতাধিক শহর ভ্রমণে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেয়েছেন?তানভীর অপু: সাত শতাধিক শহর ভ্রমণে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পাইনি। ১৪ বছর ধরে ফিনল্যান্ডে থেকে যে টাকা রোজগার করেছি, সব টাকা দিয়ে ভ্রমণ করেছি। ভ্রমণের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। খণ্ডকালীন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছি। কখনো পানশালায়, কখনো জাহাজের রেস্তোরাঁয় কাজ করেছি। কিছুদিন নিজেই একটি রেস্তোরাঁ খুলে বসেছিলাম। তা-ও একসময় গুটিয়ে নিয়েছি। টাকা জোগাড় হলেই বেরিয়ে পড়তাম। ঘুরতে গিয়ে কখনো আয়েসী জীবন কাটাইনি। সস্তা হোটেলে রাত কাটিয়েছি, কম দামি খাবার খেয়েছি, টাকা বাঁচাতে রাস্তায় রাস্তায় প্রচুর হেঁটেছি।

আপনার ভ্রমণে কে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়?তানভীর অপু: আগেই বলেছি, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক স্যারের অনুপ্রেরণায় ভ্রমণের প্রতি আগ্রহটা বেড়ে যায়। সেই সাথে আমার ছোট ভাই বিশ্ব পর্যটক তারেক অনু একশ’টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

একজন বিশ্ব পর্যটক হিসেবে নিজের দেশকে নিয়ে কোন পরিকল্পনা আছে কি?তানভীর অপু: অবশ্যই আছে। আমি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে ভ্রমণ সম্পর্কে সচেতন করতে চাই। এর জন্য ফেসবুক পেজে (Travel With Tanvir Opu) নিয়মিত লেখা ও ইউটিউবে (Travel With Tanvir Opu) নিয়মিত ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সাথে স্কুলের বাচ্চাদের ভ্রমণ সম্পর্কে জানানোর জন্য ওদের নিয়ে সেমিনার করছি। আমি মনে করি, একমাত্র ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা ও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। স্বপ্ন দেখি, তরুণ প্রজন্মের ১০টি ছেলে-মেয়েকে ভ্রমণের জন্য তৈরি করবো। তারা ভ্রমণ করবে, সেই সাথে অন্যদেরও সচেতন করবে। এমনি করে একদিন আগামী প্রজন্ম ভ্রমণের প্রতি মন-মানসিকতা তৈরি করবে।

Advertisement

ভ্রমণ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যদি বলতেন—তানভীর অপু: যতদিন বেঁচে থাকবো, ভ্রমণ করতে চাই। মূলত ভ্রমণ নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। এ জন্য ধীরগতিতে সারা পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় কোণায় যেতে চাই। এককথায় বলা যায়, প্রত্যেকটি শহরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এ জন্যই একটি দেশে অনেকবার যাওয়া হয়। যে শহর ভালো লেগেছে, ওই শহরে বহুবার গিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও যাবো। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে- আমি ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া গিয়েছি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি। এখন আফ্রিকার দেশগুলো ভ্রমণ করছি, ভাবছি আফ্রিকা শেষ করে ল্যাটিনের দিকে যাবো।

পাঠককে ভ্রমণের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু বলুন—তানভীর অপু: ভ্রমণের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাস্তব অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা বই পড়ে আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। দেশ ভ্রমণের ফলে নানা শ্রেণি ও পেশার লোকের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। বিভিন্ন দেশের মানুষের আচার-ব্যবহার, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, ভাষা-শিক্ষা, শিল্পকলা ও জীবনধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর হয় ও দৃষ্টি প্রসারিত হয়। বিষণ্নতা থেকে মুক্তির জন্যও ভ্রমণ করা যায়। ভ্রমণ মানুষকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে।

এসইউ/এমএস