দেশজুড়ে

মৌলভীবাজারে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনি বেড়েই চলেছে

ছেলধরা গুজবে ভাসছে দেশ। মৌলভীবাজারে ইতোমধ্যে এই গুজবের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে এক বৃদ্ধকে, আহত হয়েছেন ৫ জন। এছাড়া হেনস্তার শিকার হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও প্রাণহানী ঘটতে পারে।

Advertisement

বেশ কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরা গুজব রটানো হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইডি এবং ফেসবুক পেজ থেকে এসব গুজব রটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২১ জুলাই মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট ব্রিজের পাশে রিকশাচালক এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করে পথচারীরা। সময়মতো পুলিশ ঘটনাস্থলে না গেলে প্রাণহানী ঘটতে পারত।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মো. আলমঙ্গীর হোসেন জানান, আহত যুবকের নাম চন্দন পাল। সে শ্রীমঙ্গলের ভূনবির এলাকার কালিপদ পালের ছেলে। শ্রীমঙ্গল শহরে রিকশা চালায়। মৌলভীবাজার শহরে তার পূর্ব পরিচিত এক লোকের সন্ধানে স্থানীয় চাঁদনীঘাট এলাকায় গেলে সন্দেহভাজন হিসেবে জনতার রোষাণলে পড়ে।

একইদিন সকালে জেলার জুড়ি উপজেলার মাধবটিলা গ্রামে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। পরে এলাকায় কয়েকজন মুরুব্বির সহযোগিতায় ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।

Advertisement

এদিকে শনিবার রাত ১০টার দিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক বৃদ্ধকে (৫০) পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া চা বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এই ব্যক্তির পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনায় রোববার সকালে ৩ থেকে ৪শ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে জেলাজুড়ে। ছেলেধরা আতঙ্কে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে বাসিন্দারা শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত নিজ এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছেন।

পৌর শহরের এস আলম সুমন জানান, সন্ধ্যায় হঠাৎ রটে যায় এলাকায় ছেলেধরা এক নারী ঢুকেছে। পরে তাকে খুঁজতে মধ্যরাত পর্যন্ত তল্লাশি চালায় এলাকাবাসী। তবে কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একই পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে এক লোক তার ফুফাতো ভাইকে খুঁজতে আসেন। সেখানে ছেলেধরা সন্দেহে এলাকার ছেলেরা তাকে মারতে গেলে স্থানীয় যুবক আব্দুল কাইয়ুম মুন্না উদ্ধার করে তাকে নিজের হেজাফতে নেন।

Advertisement

আব্দুল কাইয়ুম মুন্না জানান, যখন জিজ্ঞেস করি তখন জানান তার ফুফাতো ভাইকে খুঁজতে এসেছেন। নাম বলেছেন কিন্তু ছবি কিংবা মোবাইল নম্বর নাই। লোকটি ভদ্রলোক। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি এ নামে আমাদের এলাকায় একজন আছেন যিনি কিছুদিন আগে জমি কিনে নতুন এসেছেন। যদি ওনাকে না সরাতাম তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

এসব বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার শাহ জালাল জাগো নিউজকে জানান, ছেলেধরা একটি ভুয়া ও মিথ্যা কথা। প্রতিটি এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করে সচেতনতার লক্ষ্যে মাইকিং করা হচ্ছে। যেসব ফেসবুক আইডি থেকে এসব গুজব রটানো হয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

রিপন দে/এফএ/এমকেএইচ