মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সম্পর্কে জনসচেনতা বাড়াতে দেশব্যাপী কার্যক্রম শুরু করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
Advertisement
গত ২৪ জুন থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে আলোচনা সভা, ফার্মেসি পরিদর্শন, আনরেজিস্টার্ড, মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, ভেজাল ওষুধ জব্দ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফার্মেসি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত নিচ্ছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলছিলেন, ফার্মেসি ব্যবস্থাপনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তিনটি লক্ষ্য। তা হলো- জনসচেতনতা বৃদ্ধি, ওষুধ বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রচলিত ওষুধ আইনের প্রয়োগ।
আরও পড়ুন>> মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ : মন্ত্রী-কর্মকর্তা-গণমাধ্যমকর্মী তুমুল বাহাস
Advertisement
তিনি বলেন, শুধু আইনের প্রয়োগ করলেই চলবে না। প্রয়োজন জনসচেনতাও। নকল, আনরেজিস্টার্ড ওষুধ কীভাবে চেনা যাবে, ফার্মেসি ব্যবস্থাপনা কীভাবে করতে হবে, ফার্মেসিতে ওষুধ কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, ইনভয়েসের মাধ্যমে ওষুধ কেনা কেন আবশ্যক, অনেক সময় ফার্মেমির মালিক/ ফার্মাসিস্ট এসব তথ্য না জেনে অপরাধ করে থাকেন।
অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুরর হমানের নির্দেশে দেশব্যাপী ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক সভা করছেন। গত ২৪, ২৭, ২৮ ও ২৯ জুন মহাপরিচালক নিজে উপস্থিত থেকে পুরান ঢাকার মিডফোর্ট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নাটোরে জনসচেতনতামূলক সভা করেন।
একই সঙ্গে তিনি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে মডেল ফার্মেসি ও মডেল মেডিসিন শপ উদ্বোধন করেন। তিনি বলেছেন, নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রতিরোধ করে বাংলাদেশের ফার্মেসি ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে হবে, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন>> মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কি আপনার বাবা-মাকে খাওয়াবেন?
Advertisement
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এর মধ্যে চট্টগ্রাম, লহ্মীপুর, ঢাকার মিরপুর, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জে জনসচেতনতামূলক সভা করেছেন।
গত ৫ মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে ৪১৩টি মামলা করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এ ছাড়া জরিমানা করা হয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা, জেল দেয়া হয়েছে ৫ জন ব্যক্তিকে, ফার্মেসি বন্ধ করা হয়েছে ৩টি।
আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফার্মেসি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ফেরত নেবেন, এ লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের ফার্মেসিগুলোর প্রতি যত নির্দেশনা
সূত্র জানায়, জনসচেতনতামূলক সভায় মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুরর হমান মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে ক্রেতা বিক্রেতা সবাইকে সচেতন হতে বলেন। তিনি জনসাধারণকে অনুরোধ করেন মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ দেখে ওষুধ কেনার জন্য এবং ওষুষধের নিবন্ধন আছে কি না অর্থাৎ ওষুধের মোড়কে ডিএআর বা এমএ নম্বর আছে কি না, তা দেখে নেয়া।
তিনি সভায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন যে, ফার্মেসির কোথাও বিক্রির জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মজুদ/সংরক্ষণ করা যাবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির জন্য সেলফ/ড্রয়ার/ রেফ্রিজারেটর অথবা ফার্মেসির অন্য কোথাও পাওয়া গেলে জব্দ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আলাদা কন্টেইনারে 'মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুষ, বিক্রির জন্য নয়' লাল কালি দিয়ে লিখে সংরক্ষণ করতে হবে এবং যথা শিগগির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
আরও পড়ুন>> ২ জুলাইয়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসের নির্দেশ
এ বিষয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেলে ফার্মেসি সিলগালা/ বন্ধ করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ফার্মেসির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ফার্মেসির সেলফ পরিদর্শনকরবেন। ফার্মেসিতে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেলে আলাদা কন্টেইনারে 'মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির জন্য নয়' লাল কালি দিয়ে লিখে সংরক্ষণ করতে হবে এবং এতদ্বিষয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে।
মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুরর হমান আরও বলেন, ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ও ফার্মাসিস্টবিহীন ফার্মেসি ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ফার্মেসিতে আইনতভাবে ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আনরেজিস্টার্ড, নকল, ভেজাল, মিসব্রান্ডেড, কাউন্টারফেইট ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, সরকারি ওষুধ, রোগনিরাময় করে এমন দাবিকৃত ফুড সাপ্লিমেন্ট ফার্মেসিতে মজুদ ও বিক্রি করা যাবে না। নকল ভেজাল আনরেজিস্টার্ড ওষুধ বিক্রি বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওভার দি কাউন্টার (ওটিসি) ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্য কোনো ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। রোগী অ্যান্টিবায়োটিকের ফুল কোর্স যাতে সেবন করে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে এবং ফুল কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করতে হবে। ফার্মেসিতে এ বিষয়ে রেজিস্টার্ড মেইনটেইন করতে হবে।
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্দেশক মূল্যের চাইতে অধিক মূল্যে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না এবং মোড়ক সামগ্রীতে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নির্দেশক মূল্যের স্টিকার সংযোজন বা মূল্য কেটে কলম দিয়ে লিখা যাবে না। ওষুধ কেনা এবং বিক্রির ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে। ওষুধ বৈধ সোর্স হতে ইনভয়েসের মাধ্যমে কিনতে হবে। ওষুধ বিক্রির ক্যাশম্যামো দিতে হবে।
তাপ সংবেদনশীল ওষুধগুলো ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যান্য ওষুধ নির্দেশিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা মনিটরিং করতে হবে। ডিপ ফ্রিজে ওষুধ সংরক্ষণ করা যাবে না।
এমইউ/জেডএ/এমকেএইচ