বিশেষ প্রতিবেদন

এইচএসসির প্রশ্নপত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন সোশ্যাল মিডিয়ায়!

>> ১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা>> পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই : শিক্ষামন্ত্রী>> ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব কোচিং সেন্টার

Advertisement

দেশব্যাপী আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবারও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বস্তরে কঠোর নজরদারি রয়েছে প্রশাসনের। কিন্তু এ নজরদারির মধ্যেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় প্রতারক চক্র।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রুপ ও পেজ খুলে প্রশ্নপত্র সরবরাহের প্রলোভন দেয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রশাসন সর্বস্তরে কড়া নজরদারি রাখছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ১০টির বেশি এমন গ্রুপ রয়েছে- যারা প্রশ্নপত্র সরবরাহের বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে- ‘এইচএসসি অল বোর্ড কোশ্চেন আউট ২০১৯’, ‘এইচএসসি কোশ্চেন আউট-২০১৯’, ‘এইসএসসি কোশ্চেন সল্যুশন’, ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘এইচএসসি ব্যাচ ২০১৯’, ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ‘এইচএসসি ২০১৯’ সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয়।

Advertisement

এসব গ্রুপের বিজ্ঞাপনগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, তাদের প্রলোভনগুলো প্রায় একই রকম। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, ‘এইচএসসি ২০১৯ এর প্রশ্ন লাগবে নাকি কারও? লাগলে দ্রুত ইনবক্স করো। কোনো অ্যাডভান্স লাগবে না। ১০০ ভাগ কমনের পর টাকা দিবা। প্রতি প্রশ্নের টাকা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দিতে হবে।’

প্রশ্নপত্রের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হকের। তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে আমরা তত কঠোর হচ্ছি। গত কয়েকটি পরীক্ষায় কোনো রকম প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এবার এইচএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই।’

‘খুবই কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া এবার প্রশ্নফাঁস ও নকল রোধে কঠোর নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এছাড়া ১ এপ্রিল থেকে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।’

Advertisement

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন থেকে জানানো হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্নপত্র পোস্ট ও গুজব রটনাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সাইবার ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে নকল রোধে পরীক্ষাকেন্দ্রে বসানো হবে ম্যাগনেট, অপ্টিক ও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর। ফলে কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই।

ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আলিমুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে চক্রটি এসব ভুয়া পোস্ট দিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আমাদের টিম অভিযান চালাচ্ছে। তাদের আটকের প্রক্রিয়া চলছে।’

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার মতো এইচএসসি পরীক্ষাও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। প্রশ্নফাঁস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রতারক চক্র বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করতে গুজব ছড়ায়। কোনো রকমের গুজবে কান দেবেন না এবং অনৈতিক কোনো লেনদেন করবেন না। অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সব গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেতন রয়েছে।’

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারের খামে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে বলে গত কয়েকদিন আগে ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার মতো এবারের পরীক্ষাতেও অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারের খামে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে প্রতিটি কেন্দ্রে। খাম কেউ আগে খুলে ফেললে ধরা পড়ে যাবে।’

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ এপ্রিল থেকে সারাদেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এসব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী ৬ মে পর্যন্ত।

প্রসঙ্গত, এ বছর আটটি সাধারণ ও মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০৯ পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। এর মধ্যে সাধারণ আটটি বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০, মাদরাসা বোর্ডের অধীনে ৭৮ হাজার ৪৫১ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক লাখ ২৪ হাজার ২৬৫ পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন।

সারাদেশে মোট নয় হাজার ৮১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে মোট দুই হাজার ৫৮০ কেন্দ্রে।

এমএইচএম/এমএআর/জেআইএম