দেশজুড়ে

শের-ই-বাংলা মেডিকেল : অচল পড়ে আছে কিডনি চিকিৎসার যন্ত্রপাতি

দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় এক কোটি মানুষের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের কোনো ব্যবস্থা নেই।

Advertisement

শুধু তাই নয়, বরিশাল মেডিকেলে কিডনি রোগীদের জন্য ইউরোলোজি ও নেফ্রোলজি বিভাগ থাকলেও পৃথক কোনো ওয়ার্ড নেই। এছাড়া এ দুই বিভাগে রয়েছে চিকিৎসক সঙ্কট। রোগীদের চিকিৎসার জন্য আনা যন্ত্রাংশগুলোও পড়ে আছে অচলাবস্থায়। ফলে কিডনি রোগের চিকিৎসায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগীদের জন্য ইউরোলোজি ও নেফ্রোলজি বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এরপর থেকে উদ্যোগ বাস্তবায়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

২০০৮ সালের ১৯ মার্চ ফের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২টি হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন, একটি ডিজিটাল রেডিওলজি (ডিআর) মেশিন, একটি পানি শোধন মেশিনসহ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের তৃতীয় তলায় কিডনি বিভাগে দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন, ডিজিটাল রেডিওলজি মেশিন ও পানি শোধন মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু হলেও সেগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে স্থাপন না করেই কারিগরি দলটি চলে যায়।

Advertisement

এরপর ২০১৬ সালে হিমো ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো ফের চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কারিগরি ব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল গত ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বরিশালে আসে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা যন্ত্রপাতি সচল করার বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং এসব চালু করতে যেসব বাড়তি যন্ত্রাংশ প্রয়োজন তার একটা তালিকা করে ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরে যান। তখন তারা ১৫ দিনের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি মেরামত করে বিভাগটি চালু করে দেয়ার আশ্বাস দিলেও যন্ত্রপাতিগুলো এখনও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

এদিকে দির্ঘদিন পর ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো ফের চালুর উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত রোববার স্থানীয় একজন টেকনিশয়ানকে দিয়ে হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন, একটি ডিজিটাল রেডিওলজি (ডিআর) মেশিন, একটি পানি শোধন মেশিনসহ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো দেখানো হয়।

টেকনিশয়ান জানান, দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে যন্ত্রপাতির কিছু যন্ত্রাংশ অকেজ হয়ে পড়েছে। সচল করতে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা ব্যয় হবে। আর এ ব্যয়ের কথা শুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আবার ভাটা পড়ে।

বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের বরিশাল বিভাগের ব্যুরো প্রধান কাওসার হোসন। তার বাবা মো. ইউনুস খান দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগে গত ২ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

Advertisement

কাওসার হোসন জানান, বিভাগীয় শহর বরিশাল। এরপরও বরিশালে কিডনি রোগীদের জন্য সেধরনের কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই রোগীকে ঢাকা নেয়া ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়। এখানে ২টি বেসরকারি ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে। সেখানেও রাখা হয় গলাকাটা দাম।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলোজি বিভাগের প্রধান শরীফ শাহ জামাল জানান, ইউরোলোজি বিভাগ থাকলেও স্থান সঙ্কটের কারণে পৃথক কোনো ওয়ার্ড নেই। সার্জারি বিভাগে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি বেডে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়। বহির্বিভাগে সপ্তাহে দুদিন দিন কিডনি রোগী দেখা হয়। ওই দুই দিনে ৪০-৫০ জন রোগী আসে। কিন্তু ভর্তি হতে পারে ৫ থেকে ১০ জন। এছাড়া ইউরোলোজি বিভাগটি চলছে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে। নার্সসহ জনবল সঙ্কটও রয়েছে। এসব কারণে কিডনি রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে।

হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মানবেন্দ্র দাস জানান, মাস দেড়েক আগে নেফ্রোলজি বিভাগে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যোগদান করে দেখেন ২টি হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন, একটি ডিজিটাল রেডিওলজি (ডিআর) মেশিন, একটি পানি শোধন মেশিনসহ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে। স্থাপন করা হয়নি। ডায়ালাইসিস মেশিন সচল না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক জানেন।

সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মানবেন্দ্র দাস বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন কিডনি রোগী আসেন। বেশিরভাগ রোগীরই ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। তাদেরকে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলা হয়। এখন অনেক ছোট হাসপাতালেও ডায়ালাইসিস হয়। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে দীর্ঘদিন থেকে হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন অচল থাকাটা দুঃখজনক।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। হয় তারা কারিগরি বিভাগ থেকে লোক পাঠিয়ে মেশিনগুলো সচল করবেন, না হয় টেকনিশিয়ান দিয়ে মেরামতের অর্থ বরাদ্দ দিবেন। তবে এসবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

এফএ/জেআইএম