বিনোদন

সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন কিনলেন ‘রূপবান’খ্যাত অভিনেত্রী সুজাতা

ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুজাতা। ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত লোককাহিনিনির্ভর চলচ্চিত্র ‘রূপবান’ দিয়ে বাংলার আপামর দর্শকের কাছে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান। এরপর তাকে দেখা গেছে বহু কালজয়ী চলচ্চিত্রে।

Advertisement

অভিনয়ের বাইরে সুজাতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শিল্পী ঐক্য জোট, শিল্পী সংঘ, শিল্পী সমিতিসহ পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতির মতো নানা পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।

সুজাতা আজিম নামে তার ফেসবুক আইডিটিতেও দেখা যায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নানা রকম প্রচারণা।

এই অভিনেত্রী এবার নামছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন অভিনেত্রী সুজাতা। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি।

Advertisement

জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করে সুজাতা বলেন, ‘জীবনসায়াহ্নে দাঁড়িয়ে বোধ করছি যেটুকু সময় খোদা আমাকে দেন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। তাই রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেজন্য এই দল থেকেই মনোনয়ন কিনেছি আজ।’

সুজাতা আরও বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত। একাত্তরের উত্তাল সময়ে আমাদের হাটখোলার বাড়িতে ছিল চলচ্চিত্র শিল্পী-গুণীজনদের পরম আশ্রয়স্থল। সেই কারণে পাকবাহিনীর রোষানলেও পড়ি আমরা। রাতের আঁধারে আমার স্বামী আজিমকে জোরপূর্বক ক্যান্টনমেন্টে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

মিলিটারি জেরার নামে আজিমের ওপর চলে অকথ্য নিপীড়ন-নির্যাতন। একাত্তরে বন্দীদশা থেকে সাময়িক মুক্তি পেলেও শেষপর্যন্ত জীবন দিয়ে অবর্ণনীয় সেই নির্যাতনের চরম মাশুল দিয়ে গেছেন আজিম। তার ইচ্ছা ছিল রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার। মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিলো। তিনি সেটা পারেননি। তার সেই ইচ্ছা পূরণ করতেই এবার আমি মনোনয়ন চাইলাম।’

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক নিয়ে সুজাতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আজিম সাহেবের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগের অনেকেই সেটা জানেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেটা ভালো করে জানেন।

Advertisement

তার সঙ্গেও আমার সম্পর্কটা ভালো। দেখা হলেই তিনি বলেন, এই যে আমাদের ‘রূপবান কন্যা’। রাজনীতিতে শক্তিশালী নেতৃত্ব তার। অবাক হয়ে যাই তাকে দেখে। তার সঙ্গে দলের হয়ে কিছু করার সুযোগ পেলে সেটা জীবনের জন্য দারুণ একটি সুযোগ হবে বলে মনে করি আমি। তিনি আমাকে খুব ভালোবাসেন।’

‘আমার বয়স হয়েছে জীবনের শেষ ইচ্ছা এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করা। আমি সেই ইচ্ছা থেকেই এবার মনোনয়ন চাইলাম। আমার বিশ্বাস জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না।’- যোগ করলেন সুজাতা।

১২ বছর বয়সে পরিচালক সালাহউদ্দিনের হাত ধরে ‘রূপবান’ ছবি দিয়ে সিনেমায় নাম লেখান সুজাতা। তার নাম ছিলো তন্দ্রা মজুমদার। সেটাকে বদলে সুজাতা রাখেন ওই নির্মাতা। আজও তিনি ‘রূপবান’র সুজাতা হয়েই আছেন দর্শক হৃদয়ে।

পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ার সুজাতার। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন, সব মিলিয়ে তিনশ’ ছবির অভিনেত্রী তিনি। সুজাতা অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের তালিকায় রয়েছে ‘রূপবান’, ‘ডাকবাবু’, ‘জরিনা সুন্দরী’, ‘অপরাজেয়’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘কাঞ্চনমালা’, ‘আলিবাবা’, ‘বেঈমান’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘প্রতিনিধি’ ইত্যাদি। ১৯৭৭ সালে নায়িকা হিসেবে সর্বশেষ রহিম নেওয়াজ পরিচালিত ‘রাতের কলি’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।

সুজাতা পরিচালিত একমাত্র চলচ্চিত্র ‘অর্পণ’। স্বামীকে নিয়ে প্রযোজনাতেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি। সুজাতা-আজিমের নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থাগুলো হচ্ছে- ‘সুজাতা প্রোডাকশন্স’, ‘এস এ ফিল্মস’ ও ‘সুফল কথাচিত্র’। এ তিনটি প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে নির্মিত হয়েছে ‘চেনা অচেনা’, ‘টাকার খেলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘অর্পণ’, ‘রূপবানের রূপকথা’, ‘বদলা’, ‘রং বেরং’, ‘এখানে আকাশ নীল’সহ অসংখ্য ব্যবসা সফল ও নন্দিত চলচ্চিত্র।

এলএ