আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনে করা আবেদন তিন কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালতের আদেশের বিষয়টি রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এখন আমরা অপেক্ষায় আছি আগামী তিন দিনে কী পদক্ষেপ নেন নির্বাচন কমিশন।
তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ কয়েকজন জামায়াতের ২৫ জনের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) রিটটি করেন। একইসঙ্গে ২৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ওইদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দেন তারা।
Advertisement
তানিয়া আমীর জানান, এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় রিটকারীদের পক্ষ থেকে। নোটিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট করা হয়।
তিনি জানান, এ বিষয়ে করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইয়াদনান রফিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আল আমিন সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম আহমেদ।
তানিয়া আমীর বলেন, ২০০৮ সালে তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিট মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন (২০১৩ সালের ১ আগস্ট) অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন।
Advertisement
এর বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল করলেও তারা এর শুনানি করেননি। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অন্য দলের প্রতীক ও স্বতন্ত্র হয়ে তারা নির্বাচন করছেন। আইনের প্রতিষ্ঠিত রীতি যা প্রত্যক্ষভাবে করা যায় না, তা পরোক্ষভাবেও করা যায় না। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হলে আদালত রুলসহ ইসির প্রতি ওই নির্দেশ দিয়েছেন।
নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, রুলে নিবন্ধনহীন দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংবিধানের সঙ্গে কেন সংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করে রিটকারীদের আবেদনে বলা হয়েছে, 'ইদানীং বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নমিনেশন পেপার জমা দেন, যা অত্র ইলেকশন কমিশন কৃর্তৃক গৃহীত হয় এবং তাদের বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা আইনগত বৈধ নয়।'
তানিয়া আমীর জানান, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ওয়েবসাইট থেকে তথ্য পাওয়া গেছে, নিবন্ধন বাতিল হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এই দলের নেতারা এবার তাদের জোটসঙ্গী বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন ২১ জন। স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আরও চারজন।
ওই ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের পদক্ষেপ নেয়ার আরজি জানিয়ে আবেদনে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইট থেকে তাদের রাজনৈতিক দলের ২৫ জন প্রার্থীর তথ্য-উপাত্ত এবং তদসংক্রান্ত প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রিপোর্ট দাখিলপূর্বক আপনার নিকট সবিনয়ে নিবেদন করছি, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলপূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আপনার সদয় মর্জি হয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রার্থনা করছি।'
রিট আবেদনকারীরা হলেন- বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, সমাজকল্যাণ সচিব শাহ মোহাম্মদ আলী হুসাইন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ এর সভাপতি হুমায়ুন কবির ও সংগঠনটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. এমদাদুল হক।
আবেদনে জামায়াতের ২৫ প্রার্থীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিব, জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলকে বিবাদী করা হয়। জামায়াত নেতাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে রুল চাওয়া হয় রিটে। এ ছাড়া রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ওই ২৫ প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত চাওয়া হয় রিটে।
জামায়াতের প্রাথীরা হলেন- ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পারোয়ার, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আব্দুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ কক্সাবাজার-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বিএনপি অন্য কোনো প্রার্থী দেয়নি। এ ছাড়া জামায়াতের নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান পাবনা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
এফএইচ/জেডএ/বিএ