‘বেতন ছাড়া কাজ করলে কর, নইলে বাড়ি যা’। রোববার এই কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সৌদি আরব থেকে ফেরত নির্যাতিতা রুমানা। বাংলাদেশি গৃহকর্মী রুমানার উপর এমন কথাই ছোড়ে দেন সৌদি অারবে তার গৃহকর্তা।
Advertisement
ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে জাগো নিউজকে রুমানা জানান, ‘তিন মাস আগে দালালের খপ্পরে পড়ে সৌদি গিয়েছিলাম। মালিক কাজ করাতো, খাবার দিতো না। সারাদিন দুই পিস রুটি খেয়ে দিন কাটাইছি। বাংলাদেশি কোনো লোক পাইনি, অত্যাচার সইতে না পেরে একদিন পালিয়ে যাই। উঠি রিয়াদের সফরজেলে। সেখান থেকে দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশে আসি। সৌদির দানব মালিক আমার পাসপোর্টটি পর্যন্ত দেয়নি। আউট পাস নিয়ে জীবন নিয়ে দেশে ফিরলাম।’
শুধু রুমানাই না, রোববার রাত ৮টায় রুমানার সঙ্গে সৌদি থেকে মালিকের অবর্নণীয় নির্যাতন শেষে দেশে ফিরেছেন মোট ৪০ জন বিভিন্ন বয়সের নারীকর্মী। যাদের মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে দালাল নামে পাষণ্ডরা বিদেশি হায়েনাদের হাতে তুলে দেয়। আর বিনিময়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা।
রোববার এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে ফেরত আসা ৪০ জনের কয়েকজন হলেন- গাজীপুরের কোণাবাড়ি এলাকার পারভিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রুকসানা ও সখিনা, হবিগঞ্জের রেহানা ও হাসিনা, বগুড়ার গোলাপ বেগম।
Advertisement
তাদের মধ্যে অনেকে জাগো নিউজের কাছে নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে জানতে চান, তাদের এমন নির্যাতনের কথা সরকারের কানে যাবে কি না?
গাজীপুরের পারভীন আক্তার তার ওপর নির্যাতনের চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, ওরা আমাদের দেশের মানুষের মতো না। মনে করেছে, আমাদের কিনে নিয়েছে, দাসীর মতোন দুই মাস কাজ করেছি, একটি টাকাও দেয়নি। বেটা ঘরের বউ রেখে আমার সঙ্গে খারাপ কাজের প্রস্তাব দিলে আমি ইজ্জত রক্ষা করতে পালিয়ে দূতাবাসে গিয়ে উঠি। সেখানে নির্যাতিত নারীদের বিচারে কিছুই করা হয় না। কেবল আউট পাস ধরিয়ে দেশে পাঠানোর সুযোগ করে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে শতাধিক নারীকর্মী সৌদি থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। সবাই সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন, যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ।
Advertisement
১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত একা অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিককে অভিবাসনে বাধা দেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে।
এমআর/জেডএ/এমবিআর