দেশজুড়ে

শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত বেদে পল্লীর শিশুরা

ফেনীর লালপোল ও সদর উপজেলার কাজিরবাগে বসবাস করে বেদে সম্প্রদায়ের ৪ শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে বসবাসকারী দুই শতাধিক শিশু কিশোরের এখন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু অভিভাবকদের বৈচিত্রময় জীবন ধারা ও অনগ্রসর বসতিতে বেড়ে ওঠা এসব শিশুরা জানে না শিক্ষা কী? ১৯৮১ সাল থেকেই সরকারি খাস জায়গায় স্থায়ী ভাবে ফেনীর লালপোলে বসবাস করে আসছে বেদে সম্প্রদায়ের ৫৪টি পরিবার। কাজীরবাগ বেদে পল্লীতে ভাড়া জায়গায় রয়েছে আরও ২৫টি পরিবার।

Advertisement

অজ্ঞতা আর অন্ধকারের মধ্যে বেড়ে ওঠা এসব শিশুদের কাঁধে যখন স্কুল ব্যাগ ঝুলানোর কথা তখন ঝোলে সাপ। যখন লজেন্সের জন্য বায়না ধরার কথা তখন তারা ঘুরে বেড়ায় দু’ মুঠো খাবারের খোঁজে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেছে নেয় আয় রোজগারের পথ। এ ভাবেই যুগের পর যুগ চলছে একটি সম্প্রদায়। বেড়ে উঠছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোল ঘেষে জুড়ে থাকা লালপোল বেদে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কিশোর মার্বেল খেলছে। একটু মনোমালিন্য হলেই নিজেদের মধ্যে শুরু করে মারামারি আর অশালীন ভাষায় গালিগালাজ। তাদের আশপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে ৪-৫ জন ময়লা আবর্জনা মাখা শিশু।

শামিম নামের এক কিশোর জানায়, তার মা আছিয়া বেগম, তারা দুই ভাই দুই বোন। প্রতিদিনই তার দেড় বছর বয়সী বোনটিকে রেখে সকালেই মা সিঙ্গা দিতে ও বাবা সাপের খেলা দেখাতে বিভিন্ন স্থানে চলে যান। তার বড় ভাই পাশের ইট ভাটায় দৈনিক ১শ টাকা বেতনে চাকরি করে। শামিম কখনও স্কুলে যায়নি। সে জানেও না স্কুলে গিয়ে কী লাভ!

Advertisement

পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরী রৌশন আক্তার (রাশেদা) জানায়, তাদের বেদে পল্লী থেকে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তুলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিবেশীর সহযোগিতায় তার বাবা তাকে ভর্তি করায়। কিন্তু এখান থেকে আর কেউ স্কুলে যায় না দেখে সেও স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়েছে। এছাড়া স্কুলের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা রাশেদার সঙ্গে এক বেঞ্চে বসতে চায় না; কথা বলতে চায় না বলেই স্কুলে তার অনাগ্রহ।

শহরতলীর কাজীরবাগ বেদে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু-কিশোর একত্রিত হয়ে তাবিজের বাক্স তৈরি করছে। এখানে কেউ টিন কাটছে, কেউ বাকা করছে, আর কেউ আঠা দিয়ে তাবিজের বক্স তৈরি করছেন। এখানে কথা হয় মিজান নামের ১২ বছর বয়সী এক কিশোরের সঙ্গে। মিজান জানায়, প্রতিদিনই সে তার বাবার সঙ্গে জেলার বিভিন্ন স্থানে সাপ ধরা ও সাপের খেলা দেখানোর কাজ করে। কোনো দিন কিছু আয় হয়; কোনো দিন আসা যাওয়া আর নাস্তার টাকাও ওঠে না। স্কুলে গেলে তার বাবাকে সহযোগিতা করার মতো কেউ থাকবে না। তাই সে স্কুলে যায় না।

মানুমিয়া নামের বেদে পল্লীর এক বাসিন্দা জানান, এখানে পড়ালেখার পরিবেশ না থাকায় কেউ এটি নিয়ে ভাবে না। সবাই ছেলে সন্তান নিয়ে আয় রোজগারে ব্যস্ত। তাই এখানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক মোস্তাকুর রহিম খান পলাশ জানান, সরকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ফেনীতে বেদে সম্প্রদায়সহ দলিত সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি চালু আছে। এ প্রকল্পের আওতায় ফেনীতে গত অর্থ বছরে ১৫৮ জনকে ২ লাখ ৩২ হাজার ৮শ টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়েছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় জানান, ওই পল্লীতে শিক্ষার বিস্তারে ইতোমধ্যে এনজিও ব্র্যাক একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে। অনুমতি পেলেই বেদে পল্লীতে বসবাসরত শিশু কিশোরদের নিয়ে স্কুল কার্যক্রম শুরু করা হবে।

Advertisement

এফএ/এমএস