কৃষি ও প্রকৃতি

অর্কিড চাষ করবেন যেভাবে

অর্কিড ছায়াযুক্ত সুনিষ্কাশিত কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে চাষ করা যায়। প্রখর সূর্যের আলোতে এ ফুল ভালো হয় না। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের জন্য জমিতে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়, যাতে ৪০-৬০% সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে। টবে চাষের ক্ষেত্রে বড় গাছের নিচে এ ফুলের চাষ করা যেতে পারে। এ জাতটি বহুবর্ষজীবী।

Advertisement

অর্কিড গাছ লাগানোর পদ্ধতি

অর্কিড ফুল জন্মানোর জন্য মাটির প্রয়োজন হয় না; তাই ইনডোর প্লান্ট হিসাবে আপনি ঘরেই এই ফুল রাখতে পারেন। কি ভাবে সঠিক পদ্ধতিতে অর্কিড ফুলের চাষ করবেন তা আজ আমরা এই নিবন্ধে বিস্তারিত তুলে ধরব । 

অর্কিড ফুলের চাষের জন্য ছায়াযুক্ত সুনিষ্কাশিত কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে চাষ খুবই উপযোগী এমন ছায়াযুক্ত জমি নির্বাচন যাতে ৪০-৬০% সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে। বহুবর্ষজীবী এই ফুল টবে চাষের ক্ষেত্রে বড় গাছের নিচে চাষ করা উত্তম। অর্কিড গাছের ফুল কাটার পর প্রতিটি গাছ থেকে পার্শ্বীভাবে সাকার বের হয়। এই সাকারসমূহ গাছে লাগানো অবস্থায় যখন শিকড় বের হয় তা তখন গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূল জমিতে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া কেটে ফেলা ফুলের স্টিকের ফুল শেষ হয়ে গেলে তা থেকেও চারা উৎপাদন করা সম্ভব (এজন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়)। উৎপাদন

গাছের ফুল বা ফুল কাটার পর প্রতিটি গাছ থেকে পার্শ্বীয়ভাবে সাকার বের হয়। এই সাকারগুলো গাছে লাগানো অবস্থায় যখন শেকড় বের হয়, তখনই গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূল জমিতে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া কেটে ফেলা ফ্লাওয়ার স্টিকের ফুল শেষ হয়ে গেলে তা থেকেও চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। এজন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।

জমি তৈরির পদ্ধতি

বিভাজন প্রক্রিয়ায় গাছ থেকে সাকার সংগ্রহ করে অথবা টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চারা তৈরি করে জমিতে লাগাতে হয়। পচা গোবর বা কম্পোস্ট, নারিকেলের ছোবড়া, ধানের তুষ ও বেলে দো-আঁশ মাটির সমপরিমাণ মিশ্রণের মাধ্যমে বেড তৈরি করতে হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন : 

টবে গোলাপ চাষের নিয়ম চাষ করুন রজনীগন্ধা রোপণ প্রক্রিয়া

সাকার লাগানোর সময় সারি থেকে সারি ৩০-৪০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হয়। সাকার লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে শেকড়গুলো পুরোপুরি মাটির নিচে থাকে।

সার প্রয়োগ

ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সমৃদ্ধ ২০:২০:২০ মিশ্র সার বেশ উপযোগী। সার পানিতে গুলিয়ে সপ্তাহে এক বা দু’দিন গাছে স্প্রে করতে হয়। স্প্রে করার সময় গাছের পাতা যেন ভালোভাবে ভিজে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পানি নিষ্কাশন

মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকতে লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হয়, যাতে সাকারগুলো মাটিতে লেগে যায়। পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্থা বুঝে সেচ দিতে হবে। এছাড়াও এ ফুল চাষের জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০ ডিগ্রি বজায় রাখতে হলে স্প্রিংকলার দিয়ে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করতে হয়। জমিতে দাঁড়ানো পানি এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। যদিও প্রচুর পানির প্রয়োজন।

Advertisement

রোগ-বালাই

ফুলটিতে সাধারণত কোনো রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। ফুলের কুঁড়ির কীড়া দমনের জন্য যেকোনো সিস্টেমিক বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফুল কাটা

সাকার থেকে গাছ লাগানোর একবছরের মধ্যেই ফুল আসে। মূলত ফুল আসার সময় ফাল্গুন-চৈত্র মাস। অপরদিকে টিস্যু কালচার থেকে পাওয়া চারা থেকে ফুল পেতে কমপক্ষে আঠারো মাস সময় লাগে। বাণিজ্যিক চাষের ক্ষেত্রে স্টিকের এক বা দু’টি ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কাটতে হবে। বাগানে বা টবে সৌখিন চাষের ক্ষেত্রে ফুল কাটার প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে গাছে প্রায় ৩০-৪৫ দিন পর্যন্ত ফুল টিকে থাকে।

ফলন

প্রতি হেক্টরে প্রথম বছর ৮ হাজার স্টিক, দ্বিতীয় বছর ১৫ হাজার স্টিক এবং তৃতীয় বছর ২৫ হাজার স্টিক পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিবছর গাছ থেকে চারা রেখে ২-৫টি সাকার সংগ্রহ করা যায়।

এসইউ/জেআইএম