ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দুইদিনের বাংলাদেশ সফরটি ছিল নানাদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এমন এক সময়ে বাংলাদেশ সফর করলেন যখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সঙ্গত কারণেই এই সফরে অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। এছাড়া দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক, দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনসহ দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা আশা করবো আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যে কোনো সমস্যা সমাধানে দুই দেশ আরো আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসবে।
Advertisement
সুষমা স্বরাজ গত রোববার তাঁর ঢাকা সফরের প্রথম দিন বিকেলে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের চতুর্থ সভা শেষে দেওয়া বক্তব্যে রাখাইন রাজ্যের চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়ে যেসব মানুষ বাংলাদেশে এসেছে তারা ফিরে গেলেই সেখানে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। তিনি বলেছেন, রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতির একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হলো সেখানে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং এ ক্ষেত্রে ভারত সহায়তা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর পর সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সুষমা স্বরাজ বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশের জন্য বোঝা। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। সুষমা স্বরাজ বলেন, যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে উভয় দেশ পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার পরিবেশে আলোচনা করেছে। উভয় দেশ অভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছে। এগুলোর অন্যতম হলো সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও কট্টরপন্থা।
সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘সব পর্যায়ে সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সমন্বিত উদ্যোগ ও কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার নীতি গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা উভয়েই ঘৃণা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের আদর্শের ঝুঁকি থেকে আমাদের সমাজগুলোকে রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। ’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দুই দেশের অন্যান্য সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জাহাজ চলাচল, মানুষে মানুষে যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে অগ্রগতিতে সন্তুষ্টির কথা জানান সুষমা।
ভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম নিকট প্রতিবেশি দেশ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানামাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে দুইটি দেশের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমিতে একই সূত্রে গাঁথা দুটি দেশ। ভাষা, সংস্কৃতি নানা দিক থেকেই মিল থাকায় এক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ দুই দেশের মানুষজন। এ অবস্থায় পারস্পরিক সমস্যা সমাধানে দুটি দেশই এগিয়ে আসবে এটাই কাম্য। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারতকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। এত বিরাটসংখ্যক রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশ যে বেশিদিন বইতে পারবে না তা তো সুষমা নিজেই বলেছেন। এছাড়া উপ-আঞ্চলিক নানা সমস্যা সমাধানে বৃহৎ প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। সুষমা স্বরাজ তার বাংলাদেশ সফর কালে বলেছেন-‘পড়শি পেহেলে, লেকিন বাংলাদেশ সবচে পেহলে।’ কার্যক্ষেত্রেও যেন এই আন্তরিকতার প্রতিফলন দেখা যায়- বাংলাদেশের মানুষ এটাই আশা করে।
Advertisement
এইচআর/জেআইএম