মধ্য রাত পেরিয়েছে বেশ আগেই। আখড়ার মূল মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে লালনের বাণী। খ্যাপা-খ্যাপিরা তখন ভাব জগতে। কেউ গানে সুর মেলাচ্ছেন, কেউ দেহ ঢোলাচ্ছেন তালে। কেউ আবার সিদ্ধি (গাঁজা) সেবনে জগৎ ভুলেছেন। সাঁইজির ধাম তখন ভবনগরে রূপ পেয়েছে। সাধন-ভজনের চরমলগ্ন সে বেলায়। অনেকেই আবার ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছেন এখানে-সেখানে।
Advertisement
এমন ভাবলগ্নেই লালন সাঁইজির মাজার ঘেঁষে পূর্ব কোণে জনবিশেক মানুষের জটলা। মধ্যখানে চেয়ারে বসা অর্ধশত বছরের এক পাগল। উদাম শরীর। পরনে লাল রঙের হাফপ্যান্ট। পিঠ বেয়ে পড়া চুলে কে বা তেল দিয়ে দিয়েছে। তাতে ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়ে চিক চিক করছে। খয়ের-জর্দায় পান খেয়েছে, তা কাছে যেতেই বোঝা গেল।
উদাম শরীরের ৮০ শতাংশ ঢাকা লোহার শিকলে। অসংখ্য প্যাঁচের শিকল ঘার থেকে নেমে কোল পর্যন্ত ঠেকেছে। শিকলের কাছের অংশে ছোট-বড় ১০টি তালা লাগানো। তবে দেখা মেলেনি তালার চাবি। দু’হাতে ১০টি করে লোহার বালা। সাড়া শরীরে কাটার দাগ। শিকল বয়ে বয়ে পিঠও বেশ শক্ত হয়ে গেছে তার।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোনো অবস্থাতেই জাগো নিউজ ধূমপান বা এর প্রচার-প্রচারণার পক্ষে নয়। ছবি- মাহবুব আলম
Advertisement
বয়ে বেরানো শিকল আর তালা মিলে প্রায় দুই মণ ওজন। জানান, এ পাগলের সেবক ফজলু। ফজলু মিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডে। আলাপে ফজলু মিয়া বলেন, “তার (পাগলা) বাড়ি কোথায় জানি না। তিনিও বলেন না। তবে নাম তার ‘জঙ্গল পাগলা’। কথা খুবই কম বলেন। সংসার আছে কিনা তাও জানা নেই। মাজারে মাজারে থাকেন। খান মানুষের কাছে থেকে হাত পেতেই। কাঁচা মাংস, মাছ দিলে খুশি হন তিনি।”
কেন শিকল বাঁধা? -জানতে চাওয়া হয় ‘জঙ্গল পাগলা’র কাছে। ধীর এবং স্থিরতা বজায় রেখে বললেন, ‘গুরুর নির্দেশে শিকল পরেছি। আজমির শরিফের এক বাবার কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েই ঘর ছেড়েছি। ৩৬ বছর হয় গলায় শিকল বেঁধেছি। আরও ২৪ বছর গলায় রাখব, গুরুর নির্দেশে। তবেই জীবনের মুক্তি।’
আলাপের মাঝ বেলায় আরও জনা কয়েক ভক্ত এসে জঙ্গল পাগলের শরীর টিপতে শুরু করলেন। নিজেরাই নানা কথার বাণ তৈরি করতে থাকলেন। পাগলের গুণাবলি নিয়ে ছবকও দিতে থাকলেন। শেষ বেলায় বোঝা গেল, পাগলের মনোবাসনা আর যাই হোক, লোক ভুলানো বিশেষ সিন্ডিকেটের মধ্যমণি যে তিনিই তা বেশ হলফ করেই বলা যায়।
এএসএস/আরএস/আইআই
Advertisement