খেলাধুলা

উইকেট নয় সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করতে চান মুশফিক

বাংলাদেশ এখন অস্ট্রেলিয়াকেও হারাতে পারবে। এটা এখন আর শুধু আশার সংলাপ নয়। রীতিমত বিশ্বাসও। এ বিশ্বাসটা যে শুধু ভক্ত ও সমর্থকদের মনে জন্মেছে, তা নয়। বাংলাদেশের কোচ, অধিনায়ক ও ক্রিকেটারদের সবার মাঝেই এ বিশ্বাস প্রবল।

Advertisement

কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম- সবার বিশ্বাস স্টিভেন স্মিথের দলকে তুলোধুনো করার সামর্থ্য আছে এখন বাংলাদেশের। আত্মবিশ্বাসের জায়গায় কোন কমতি বা ঘাটতি নেই।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ মাঠে গড়ানোর ২৪ ঘন্টা আগে আজ দুপুরে অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে বাংলাদেশ অধিনায়ক যেন আস্থার প্রতিমুর্তি। শরীরি অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল ভিতরে ভয়-ডরের বালাই নেই। কথা শুনে মনে হলো- হারের চিন্তা তো নয়ই, ড্রয়ের চিন্তাও নেই।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বমানের দল। কঠিন প্রতিপক্ষ। প্রচণ্ড পেশাদার। এমন বোধ ঠিকই আছে; কিন্তু তারপরও চিন্তা-চেতনায় অজিদের হারানোর কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়- অসিদের হারানো সম্ভব। তাদের হারানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য, শক্তি এবং অস্ত্র- সবই আছে।

Advertisement

এ বোধ ও বিশ্বাসটা ভিতরে কাজ করলেও কিছু প্রাসঙ্গিক চিন্তা এসে বাসা বাধছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা শুনে মনে হলো টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম উইকেট নিয়ে খানিক দ্বিধায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, অসি বধে শুধু মুশফিক বাহিনীর ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগে জ্বলে ওঠাই শেষ কথা নয়। পাশাপাশি উইকেটেরও সহায়তা দরকার। উইকেট স্পিন সহায়ক হলেই স্মিথ, ওয়ার্নার ও ম্যাক্সওয়েলদের ঘায়েল করা সম্ভব।

কেউ কেউ হয়ত বলবেন, কেন টিম অস্ট্রেলিয়ারওতো নাথান লিওনের মত মেধাবি ও প্রতিভাবান স্পিনার আছে। তা আছে; কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশের বোলিংয়ের মূল শক্তিও স্পিন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর অক্টোবরে এই শেরে বাংলায় অবিস্মরনীয় জয়ের নায়কও স্পিনাররা। বিশেষ করে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ।

ইংলিশদের দুই ইনিংসের ২০ উইকেটই নিয়েছিলেন বাংলাদেশের তিন স্পিনার মিরাজ, সাকিব ও তাইজুল। অভিষেক হওয়া অফ স্পিনার মিরাজ শেরে বাংলায় ৬ + ৬ = ১২ উইকেটের পতন ঘটিয়ে সাফল্যর রুপকার হন।

প্রথম ইনিংসে অফস্পিনার মিরাজ একাই ঝুলিতে তোলেন ৬ উইকেট (৮২ রানে)। এ ছাড়া বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ৬৫ রানে তিনটি ও সাকিব ৪১ রানে ১ উইকেট পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংলিশদের ১০ উইকেট ভাগাভাগি করে নেন মিরাজ (৬/৭৬ ) ও সাকিব (৪/৪৯)।

Advertisement

শুধু ইংলিশদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়টির কথা বলা কেন, বাংলাদেশ ঘরের মাঠে সব বড় দলের ভিত কাঁপিয়েছে স্পিনারদের হাত ধরে। সবার জানা দেশের মাটিতে টিম বাংলাদেশের মূল শক্তিই স্পিন।

আর তাই হোম সিরিজে বাংলাদেশ দল সব সময় স্পিন সহায়ক উইকেটই চায়। ঘরের মাঠ- শেরে বাংলা, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়াম, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট মানেই তাই ‘স্লো এন্ড লো’ পিচ।

যেহেতু ইংলিশদের বিরুদ্ধে গত বছর এই শেরে বাংলায় স্লো-লো ও খানিক টার্নিং উইকেটে সাফল্য মিলেছে। তাই এবারো সবাই ধরেই নিয়েছেন, ইংলিশদের বিরুদ্ধে সিরিজের মত এ সিরিজেও শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের পিচ হবে স্পিন ফ্রেন্ডলি।

কিন্তু অতি বৃষ্টিতে উইকেটের চরিত্র, গতি প্রকৃতি ও আচার আচরণ নিয়ে জন্মেছে ঘোর সংশয়। উইকেট আগের মত স্পিনারদের পক্ষে থাকবে তো? না কি ক্রমাগত বৃষ্টিতে নিচের স্তরে পানি জমে যাওয়ায় সিম বোলিং উপযোগী হয়ে পড়েছে?

এ প্রশ্ন উঠেছে। এ চিন্তা টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের মনেও। অবিরাম বর্ষণে উইকেটের চরিত্র পাল্টে যেতে পারে। এমন সংশয় মুশফিকের। তাই তো শনিবার দুপুরে হল ভর্তি সাংবাদিকের সামনে টাইগার অধিনায়কের মুখে উইকেট নিয়ে চিন্তার কথা।

তিনি বলেন, ‘উইকেট নিয়ে খানিক চিন্তা আছে। আসলে মিরপুরের উইকেটের চরিত্র বোঝা কঠিন। এবার আবহাওয়া ও কন্ডিশন ভিন্ন। যদিও আমরা অনুশীলন করার অনেক সুযোগ পেয়েছি তারপরও উইকেট নিয়ে আগাম মন্তব্য করা কঠিন। এ রকম আবহাওয়ায় উইকেটের প্রকৃতি সব সময় বদলে যায়। দেখা যাচ্ছে সারাদিন রোদ পাওয়া যায় না, আবার একটা সময় পাওয়া যায়। এটা কঠিন। তারপরও আমরা এই মাঠে শেষ পাঁচ-ছয় বছর ধরে অনুশীলন করেছি। ম্যাচও খেলেছি প্রচুর। ওদের থেকে একটু হলেও আমাদের ধারনা ভালো আছে।’

মোদ্দা কথা, বাংলাদেশ অধিনায়ক উইকেট সম্পর্কে শেষ কথা বলতে নারাজ। আর সে কারণেই উইকেট কেমন হবে? এমন প্রশ্নর মুখে মুশফিকের জবাব, ‘উইকেট বলতে টেস্ট শেষ হলে বলা যাবে।’

আবহাওয়াকে বিশেষ বিবেচনায় এনে মুশফিক বলেন, ‘ক্রমাগত বৃষ্টিতে উইকেট তৈরির কাজ সহজ ছিল না একদমই। কারণ উইকেট তৈরির ক্ষেত্রে কতটুকু পানি দিতে হবে, পরদিন রোদ উঠবে কি না, তা ভালমত শুকাবে কি না- এগুলো বিবেচনায় আনতে হয় কিওরেটরদের।’

বাংলাদেশ অধিনায়ক বোঝাতে চাইলেন, ‘ক্রমাগত বৃষ্টিতে সে কাজটা যথাযথভাবে করা কঠিন ছিল। যে উইকেট প্রস্তুত করছে তার জন্যও কাজটা কঠিন।’

যে মাঠে মাত্র ১০ মাস আগে স্পিন সহায়ক পিচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০৮ রানের বড় জয়ের দেখা মিলেছে- সেই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নামার ২৪ ঘন্টা আগেও উইকেট নিয়ে খোদ স্বাগতিক অধিনায়কের মনেই রাজ্যের সংশয়, দ্বিধা।

তাহলে এত আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি কি? নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠছে। এ প্রশ্নের জবাব- বাংলাদেশ অধিনায়কের আসলে উইকেটের চেয়ে নিজ দলের ব্যাটিং ও বোলিং সামর্থ্যরে ওপরই আস্থা বেশি। মুশফিক তাই উইকেটের আচরণ নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করতেই বেশি আগ্রহী।

তার অনুভব ও উপলব্ধি এরকম- উইকেটের চরিত্র নিয়ে যেহেতু সংশয় আছে, তখন নিজ শক্তি ও সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করাই উত্তম। সে কারণেই মুখে এ কথা, ‘কন্ডিশনের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা সামর্থ্যরে কতটা প্রয়োগ ঘটাতে পারি। আপনি যতই ভালো কন্ডিশন পান না কেন, যদি পারফর্ম করতে না পারেন তাহলে কিছুই ভালো হবে না। আমরা চেষ্টা করব ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই যেন ভালো করতে পারি। প্রত্যকেটা সেশন বাই সেশন, ভালো করতে পারি তাহলে ভালো কিছু সম্ভব।’

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম