গত রোববার দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটিতে দু’দলের খেলা দেখেই মনে হয়েছে, তারা যে করেই হোক সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে এড়াতে চায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতলো ভারতই এবং সেমিতে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ারই।
Advertisement
আইসিসির যে কোনো টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ভারত পড়া মানেই যেন নিশ্চিত হার। এই একটি দলের বিপক্ষে ‘দাদাগিরি’ ফলাতে ব্যর্থ হয় ভারতীয়রা। ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল যার সর্বশেষ প্রমাণ। সেবার আহমেদাবাদের মোতেরায় বিশ্বের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া।
পুরো টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খেলে এসেও ফাইনালে এসে অস্ট্রেলিয়ার সামনে পড়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ভারতীয়দের। হৃদয়ভাঙার সেই গল্পের পর আর ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়নি ভারতীয়রা। এবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে সেই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি আবার ভারত। রোহিত শর্মারা কী পারবে, দুই বছর আগের সেই হারের বদলা নিয়ে ফাইনালে উঠতে? নাকি আবারও দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়ার দাপট?
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বিকাল ৩টায় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া। কে জিতবে আজ? কে উঠবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে? সে পর্যন্ত আপাতত অপেক্ষা।
Advertisement
২০২৩ সালে আহমেদাবাদ ছিল ভারতের ঘরের মাঠ। আর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বাগতিক দেশ পাকিস্তান। যদিও ভারতের কারণে এই টুর্নামেন্টের সূচি নিয়ে যা হয়েছে,তা রীতিমত বিস্ময়কর। তাতে এই আসরের আয়োজক কাগজে-কলমে পাকিস্তান হলেও মানুষ লছে এটা ভারতের টুর্নামেন্ট! ভারত পাকিস্তানে যেতে রাজি হয়নি, তাই রোহিত শর্মারা সব ম্যাচ খেলছেন দুবাইয়ে। উইকেট-কন্ডিশন অপরিবর্তিত থাকায় স্পিন-ভারী দল নিয়ে এসেছে ভারত। অন্যদিকে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া টুর্নামেন্টের চার ভেন্যুর তিনটিতে খেলেছে।
বাকি দুই সেমিফাইনালিস্টের একটি নিউজিল্যান্ড চার ভেন্যুতেই খেলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা তিনটিতে খেলেছে। এর মধ্যে দুবাইয়ে কোনো ম্যাচ না খেললেও সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় একবার দুবাই যেতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। ম্যাচ পড়েনি, তাই দুবাইয়ের গলফ কোর্সে সময় কাটিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা।
দুবাইয়ের সব ম্যাচ হচ্ছে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে, যে মাঠে এরই মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে ভারত। সব কটিই জিতেছে ব্যাটার নয়, স্পিনারদের দাপটে। একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ ম্যাচ, যে ম্যাচে শুরুতেই প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেন পেসার মোহাম্মদ সামি। সর্বশেষ গ্রুপ ম্যাচে ব্যাটাররা দলকে খাদের কিনারায় ফেলে এলেও স্পিনারদের দাপটে ঠিকই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে ভারত। তাতে দুবাইয়ের মাঠকে ঘরের মাঠ মনে হতেই পারে রোহিত শর্মারদের।
কিন্তু এই অপবাদ মানতে রাজি নন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি বলেন, ‘সে রকম (ঘরের মাঠ) কিছু নয়। আমরা জানি না উইকেট কেমন আচরণ করবে। সেমিফাইনালে কোন উইকেট ব্যবহার করা হবে, সেটাও জানি না। তবে যে কন্ডিশনই হোক না কেন, আমার মানিয়ে নিতে হবে। আর এটা আমাদের ঘরের মাঠ নয়, এটা দুবাই। এখানে আমরা খুব বেশি ম্যাচ খেলি না। তাই অন্যদের মতো এটা আমাদের জন্যও নতুন মাঠ।’
Advertisement
দুবাইয়ের ভিন্ন তিনটি উইকেটে এরই মধ্যে পরিচয় খেলেছে ভারত। যার একটিতে আজ সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিশেষ করে যে উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত, সেই উইকেটেই অনুষ্ঠিত হতে পারে আজকের সেমিফাইনাল।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচে তিন স্পিনার খেলিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের করা ২৪১ রানের জবাবে বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি না পেলে ম্যাচ এতটা একপেশে ম্যাচ হতো না হয়তো। রোহিত শর্মা বলেন, ‘এখানে প্রতিটি উইকেট ভিন্ন আচরণ করে। আগের তিন ম্যাচে সেটাই দেখেছি। নিউজিল্যান্ডের পেসাররা দারুণ বোলিং করেছেন, যা আগের দুই ম্যাচে দেখিনি। তা ছাড়া রাতে একটু ঠাণ্ডা পড়ে। তাতে সিমাররা বাড়তি সুইং পান।’
অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে কামিন্স, স্টার্ক, হেজলউড কিংবা মিচেল মার্শ নেই। তবে নতুন যারা আছেন, তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। স্পিন বোলিংয়েও অ্যাডাম জাম্পার মত তারকা আছেন। নতুন স্পিনার কুপার কনোলিকে একাদশে নেয়া হলে বোলিং হবে আরও ধারালো।
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা বেশ এগিয়ে। ওপেনার জস ইংলিস-স্মিথরা ফর্মে আছেন। কোহলি সেঞ্চুরি করেছেন, রানে আছেন শুভমান গিল-শ্রেয়াস আইয়াররা। সুতরাং, ব্যাটিংয়ে টক্করটা বেশ ভালোই হবে।
রোহিত শর্মা বলে দিয়েছেন, ‘দেখুন, ওরা (অস্ট্রেলিয়া) দুর্দান্ত প্রতিপক্ষ। আমাদের আগের তিনটি ম্যাচে কী করেছি, তা ভাবনায় রাখতে হবে। সেভাবে এগোতে হবে। আমরা জানি, আমাদের প্রতিপক্ষ কিভাবে খেলে।’
আইএইচএস/