দেশজুড়ে

কালের সাক্ষী হয়ে ১১০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

কালের সাক্ষী হয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ১১০ বছর আগে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী পদ্মা নদীর ওপর তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ট্রেন চলাচলের জন্য এ ব্রিজ উদ্বোধন করে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড র‌্যাবন হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই ব্রিজটির নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।

Advertisement

পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন সরকার আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করতে পদ্মা নদীর ওপর ৫,৮৯৪ ফুট বা ১.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজ নির্মাণ করে। ১৫টি গার্ডার বা স্প্যান সম্বলিত ব্রিজটি ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলসের পেশাগত নির্মাণ শৈলীর স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। ব্রিজটি নির্মাণের জন্য ১৯০৯ সালের প্রাথমিক জরিপ, জমি অধিগ্রহণ ও গাইডব্যাংক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাইয়ের পর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

ব্রিজটির ওপরে দুইটি ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হয়। ব্রিজের ১৫টি স্প্যানের প্রতিটির উচ্চতা ৫২ ফুট। প্রতিটি স্প্যানের ওজন ১ হাজার ২৫০ টন। ১৫টি স্প্যান ছাড়াও ব্রিজের উভয় পাশে আরও তিনটি করে ছয়টি অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান রয়েছে। নান্দনিক এ রেল সেতুটি বর্ষা মৌসুমের হিসাব অনুযায়ী সর্বোচ্চ পানির লেভেল থেকে ৪০ ফুট এবং গ্রীষ্মে সর্বনিম্ন পানি প্রবাহ থেকে ৭১ ফুট উচ্চতায় নির্মিত হয়। এ কারণে এ ব্রিজের নিচ দিয়ে স্টিমারসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর-দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর যোগাযোগ বন্ধ করতে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর একটি বিমান থেকে বোমা ফেলে এ ব্রিজের ১২নং স্প্যানটি ভেঙে ফেলা হয়। পরে ১৯৭২ সালে একই নকশায় এই স্প্যানটি পুনঃস্থাপন করা হয়। তারপর থেকে এখন অবধি ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

Advertisement

উপজেলার রূপপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ব্রিজের সৌন্দর্যে যেকোনো মানুষ বিমোহিত হবে। নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন এ ব্রিটিশ স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে আসে। এটি শুধু আমাদের এলাকার অহংকার নয় বরং পুরো বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা।

এ ব্রিজের পাশেই সড়ক পথে যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে লালন শাহ সেতু। এছাড়াও এ ব্রিজের পাদদেশেই নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। একই স্থানে তিনটি স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন এখানে মানুষের ভিড় জমে।

ট্রেনচালক (লোকো মাস্টার) রবিউল ইসলাম বলেন, এই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচলে ঝাঁকুনি বা অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় না। তবে ব্রিজে চলাচলের সময় ট্রেনের গতি কমানোর নির্দেশনা রয়েছে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ব্রিজটি নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ পর্যবেক্ষণ করা হয়। ১১০ বছরেও ব্রিজটির সবকিছু ভালো রয়েছে। কোথাও কোনো ত্রুটি বা সমস্যা নেই। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে আরও ২০-২৫ বছর এই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব।

Advertisement

পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, নির্মাণের সময় আয়ুকাল ১০০ বছর ছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ ব্রিজ নিয়ে গবেষণা ও লৌহ কাঠামোর ধাতুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আরও ২৫ বছর এটি চলবে বলে গবেষকরা জানান। ফলে ব্রিজটি ২০৪০ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকছে। তারপরও এ ব্রিজের পাশে নতুন আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। নতুন ব্রিজের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

এফএ/জিকেএস