ভ্রমণ

সাজেকে সবুজের বুক চিড়ে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, সবুজ বৃক্ষরাজির ফাঁকে ফাঁকে শুভ্র মেঘের নিত্য লুকোচুরি খেলা। সেখানে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি। সেখানেই দলবেঁধে নামাজ আদায় করছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা। বলছিলাম দেশের সবচেয়ে উঁচুস্থানে নির্মিত ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’ এর কথা।

Advertisement

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজের বুক চিড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদের নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। যার অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুইপাড়ায়।

দেশের সব থেকে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র সাজেক ভ্যালিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নামাজ আদায়ের কথা বিবেচনা করে সাজেকে মসজিদ নির্মাণে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এ মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা।

আরও পড়ুন: লাশ-মাছ-যাত্রী সবই চলে একসঙ্গে, একই বাহনে কামানের গোলা নিক্ষেপ-পুকুরে গোসল, রোজা পালনের বিচিত্রসব রীতি

চারতলা বিশিষ্ট ভিতের ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির উচ্চতা ২২ ফুট। ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট আয়তনের মসজিদটিতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট। ২০২০ সালের দিকে সাজেকে মসজিদ নির্মাণে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

Advertisement

ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুইপাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে।

দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা খলিলুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে সালাত আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের পাশাপাশি জুমা এবং তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে। এসব জামাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক অংশ নেয়।

সাজেকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোয় সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দিগুণেরও বেশি হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক। মসজিদ না থাকায় এত বছর নামাজ আদায়ে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে ধর্মভীরু মুসলিম পর্যটকদের। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই এই মসজিদে সালাত আদায় করতে পারেন সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকরা। প্রকৃতির অবারিত সবুজের মাঝে সুনসান পরিবেশে এমন সৌন্দর্য-মণ্ডিত উপাসনালয়ে আরাধনার সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা দারুণ উচ্ছ্বসিত।

ময়মনসিংহ থেকে সাজেক ঘুরতে আসা পর্যটক রাহাত হোসেন বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে সাজেক ঘুরতে এসে মসজিদের এমন নীরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।

Advertisement

চট্টগ্রামের হারুনুর রশীদ বলেন, সাজেকের চূড়ায় মসজিদ ভাবতে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি। পাহাড়ের চূড়ায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদে সালাত আদায় সাজেক ভ্রমণের বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন জয়নাল আবেদীন খোন্দকার নামে অপর পর্যটক।

দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় মেটানো হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি সংকট থাকলেও ওজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য সব পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিন এই মসজিদে গড়ে পাঁচ হাজার লিটার পানি লাগে। পানি ক্রয়সহ আরও আনুষঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এই মসজিদে নিয়মিত সালাত আদায় হচ্ছে।

এমআরবি/জেএস/এএসএম