বিরল রোগে আক্রান্ত বাগেরহাটের গজালিয়ার সোনাকান্দর গ্রামের শিশু আলিমুনের চিকিৎসায় তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
Advertisement
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মণ্ডল হাসপাতালে ভর্তি শিশু আলিমুনকে রোববার রাতে দেখার পর এ সিদ্ধান্ত নেন। সোমবার দুপুরে আলিমুনের সুচিকিৎসার জন্য মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. সাইদ আহমেদকে প্রধান করে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের অন্য দুই সদস্য হলেন স্কিন ডিভি কনসালটেন্ট ডা. সাদী ও বাগেরহাট সদর হাপসাতালের আরএমও ডা. মোশারেফ হোসেন।
সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মণ্ডল জানান, আমরা শিশুটির সুচিকিৎসা করতে চাই। সেজন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা কি রিপোর্ট জমা দেন তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এর আগে রোববার বিকেলে কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ নাসির, ওই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন মাঝি ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. ছালাম শেখ কচুয়া থেকে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুল ও তার মা ছকিনা বেগমকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন।
Advertisement
বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন জানান, অর্থাভাবে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু ছাত্র আলিমুনের চিকিৎসা হচ্ছে না ফেসবুকে এক সংবাদকর্মীর আবেদনে সাড়া দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। তাদের পরামর্শে শিশুটির উন্নত চিকিৎসার ধাপ হিসেবে রোববার বিকেলে আলিমুনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আলিমুনের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী অসহায় শিশু ও তার পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। মেডিকেল বোর্ড শিশু আলিমুনকে বাগেরহাট থেকে ঢাকায় নেয়ার নির্দেশ দিলে সে প্রস্ততিও তাদের রয়েছে বলে জানান এ নেতা।
বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রামের ৬ বছর বয়সী অসহায় আলিমুন বিরল রোগে আক্রান্ত তার চিকিৎসা প্রয়োজন এমন আবেদন করে ওই গ্রামের পল্লীচিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম দুটি ছবিসহ তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই পোস্টটি জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ শেয়ার করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। একপর্যায়ে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন অসহায় এ শিশুর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার কথা ওই সংবাদকর্মীর কাছে প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন জানান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক-৩ ডা. জুলফিকার আলী লেলিন তাকে বলেন, শিশুটিকে ঢাকার যেখানেই চিকিৎসা সম্ভব সেখানেই সরকারি খরচে চিকিৎসা করানো হবে। তিনি শিশুটিকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করতে বলেন।
কে এই আলিমুন
Advertisement
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রামের দিনমজুর আজাহার শেখ ও মা সকিনা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান আলিমুন শেখ। সে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত সোনাকান্দর হাজীবাড়ি জামে মসজিদের মসজিদভিক্তিক মক্তবের শিশুশ্রেণির ছাত্র।
অসহায় শিশু আলিমুনকে মক্তবের শিক্ষক ও পল্লীচিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম খুব স্নেহ করেন। বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আলিমুন হাজীবাড়ি জামে মসজিদের মক্তবে পড়ালেখা করছে। অসহায় শিশুটির স্কুলব্যাগসহ বিভিন্ন উপকরণ মাঝে মধ্যে কিনে দেন জাহিদুল ইসলাম।
আলিমুনের মা ছকিনা বেগম জানান, দুই বছর বয়সে তার মাথা ও শরীরে এই রোগ দেখা দেয়। প্রথমে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক দেখিয়ে কোনো কাজ না হলে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করেন। দারিদ্র্যতার মধ্যেও আলিমুনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিতে বললেও অর্থাভাবে তা আর হয়নি।
তিন বছর বয়সে আলিমুনের বাবা আজাহার শেখ মারা যান। অসহায় সকিনা শিশু শুকুর আলী শেখ ও আলিমুন শেখকে নিয়ে ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে থাকেন। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে মা সকিনা বেগম রাস্তায় দিনমজুরের কাজে নামেন। তিনজনের খাবার জোগাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় সকিনাকে।
দেড় বছর আগে রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে আরেক দিনমজুর জাকিরকে দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে বেছে নেন সকিনা। নতুন সংসারে এখনও কোনো সন্তান হয়নি তার। কচুয়া উপজেলায় বসবাস করার সুবাদে মাঝে মধ্যে শুকুর ও আলিমুনের খোঁজ নেয় তাদের মা।
বর্তমানে শিশু আলিমুন সোনাকান্দর গ্রামে দিনমজুর চাচা মোজাহার শেখ ও বড় চাচা শাজাহান শেখের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠছে।
শওকত আলী বাবু/এমএএস/আরআইপি