বিশেষ প্রতিবেদন

বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর নিয়ে আকাশে থাকা একমাত্র নারী ক্যাপ্টেন আলেয়া

বিমান চালনা পৃথিবীর অন্যতম সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং কাজের একটি। একটা সময় ছিল যখন এ কাজটি পুরুষের পক্ষেই সম্ভব বলে মনে করা হতো। তবে সময়ের ব্যবধানে নারীরা এখন বিমান চালনার পেশায় সুউচ্চ শিখরে। সাধারণ কোনো এয়ারক্রাফট নয়, নতুন প্রজন্মের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। এমন একজন অসাধারণ নারী ব্যক্তিত্ব ক্যাপ্টেন আলেয়া মান্নান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একমাত্র বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর চালাতে সক্ষম তিনি। বিমানকে যিনি নিজের ঘর সংসার আর সন্তানের মতো ভালোবেসে ২৪ বছর পার করেছেন। নীরবে নিভৃতে তিনি পেশাগত মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করে গেছেন। নারী দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজকে বলেন তার পেশাগত জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিক মজুমদার।জাগো নিউজ : বিমানবহরের সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ এর একজন অভিজ্ঞ পাইলট আপনি। একজন নারী হিসেবে এ অর্জনকে কীভাবে দেখেন?আলেয়া মান্নান : আমরা সবাই প্রথমত মানুষ। নারী তো আর আলাদা কিছু নয়। জীবনের সব ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে। নারীকে কোথাও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। আবার কখনো বাড়তি সুবিধাও দেয়া হয় না। তাই সঙ্গত কারণে কাউকে নারী বানিয়ে রাখা উচিত নয়। ৭৭৭ চালানো দেশের একমাত্র নারী ক্যাপ্টেন হিসেবে নিজেকে অসাধারণ কিছু ভাবি না। কেউ যদি নিয়মের মধ্যে চলে এবং পেশায় শতভাগ মনোযোগী হয়, তবে সে অবশ্যই সন্মানের সুউচ্চ শিখরে পৌঁছবেই। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কিংবা সরল যুক্তির অবকাশ নেই। আমি দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সমতায় বিশ্বাসী।জাগো নিউজ : সমতার কথা বলা হলেও এটা তো সত্যি যে, বিমানে ১৪০ জন ককপিট ক্রুর মধ্যে আপনারা মাত্র চারজন ক্যাপ্টেন এবং পাঁচজন ফার্স্ট অফিসার। তুলনামূলক চিত্রটা এমন কেন?আলেয়া মান্নান : চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় দেশের অনেক মেধাবী মেয়েরা ঘর সংসারের বলয় ভেদ করে এ পেশায় আসতে পারে না বা পেরে ওঠে না। যারা এ বলয়ে আসতে পেরেছে তারা সবাই ভালো করেছে।জাগো নিউজ : এ পেশায় আসতে পারা এবং সফলতার পেছনে কার অবদান বেশি?আলেয়া মান্নান : অবশ্যই আমার বাবার। তবে পাইলট হবো এটি কারও ভাবনায় ছিল না। বাবা আমার দৃঢ়তা ও একাগ্রতা দেখে বুঝতেন আমি অবশ্যই ভালো কিছু করব। আমার মা জাহানারা মান্নান চাকরি করতেন ব্রিটিশ অ্যাম্বাসিতে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। বাবা-মার সন্মানের জব আমাকে বড় হতে বিশেষ অনুপ্রেরণা দিয়েছে।জাগো নিউজ : আপনার শৈশব ও স্কুল জীবন সম্পর্কে একটু বলুন?আলেয়া মান্নান : বাবা সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হওয়ায় সেনানিবাসে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। কুমিল্লা সেনানিবাসে জন্ম হলেও স্কুল জীবন শুরু হয়েছে শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুলে। ১৯৮৩ সালে শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হই আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। ১৯৮৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর উচ্চ শিক্ষা অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের প্যানসেলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। একই সময় আমার ভাই ঢাকায় ফ্লাইং ক্লাবে ভর্তি হন। যুক্তরাষ্ট্রে আমার ভালো না লাগায় বছরের মাথায় দেশে ফিরে বৈমানিক হওয়ার সংকল্প করি এবং ফ্লাইং ক্লাবে ভর্তি হই।জাগো নিউজ : বিমানে কবে যোগ দিলেন, শুরুটা কবে?আলেয়া মান্নান : আমার ক্যারিয়ার শুরু বিমানের ক্যাডেট পাইলট হিসেবে ১৯৯২ সালে। ১৯৯৪ সালে ফার্স্ট অফিসার হই। ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রথম ১৯৯৯ সালে এফ-২৮ চালানো শুরু করি। আর নারী পাইলট বলতে তখন আমি একা। ২০০৭ সাল থেকে চালাতাম এয়ারবাস। ২০১৪ সালে এসে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর চালানোর লাইন্সেস পাই।জাগো নিউজ : বিমানের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে কিছু বলুন।আলেয়া মান্নান : বিমানের কর্মপরিবেশ সত্যিই উপভোগ্য। এখানে কাজ করতে গিয়ে কখনো বৈষম্যের স্বীকার হইনি। এখানে কর্মরত সবাই অসাধারণ আন্তরিক।জাগো নিউজ : আপনি তো অনেক ব্যস্ত থাকেন। এতো ব্যস্ততার পর আপনার বিশেষ শখগুলো কি পূরণের সুযোগ পান?  আলেয়া মান্নান : আমার শখ হচ্ছে গান শোনা এবং রান্না করা। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে আমি নিজ হাতে রান্না করি। অবসরে পুরনো বাংলা ছবির গান, ভারতীয় আধুনিক বাংলা গান শুনতে কখনো ভুলি না। আরএম/এএইচ/এমএস

Advertisement