বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা তিন মাসের হরতাল-অবরোধে ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৮ জন। ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে লাখো কোটি টাকার বেশি। ক্লাস-পরীক্ষা বারবার বন্ধ হওয়ায় শিক্ষাসূচি হয়েছে বিপর্যস্ত। এসব ক্ষতি কত দিনে উশুল হবে তার জবাব নেই কারও কাছেই!৩ জানুয়ারি রাতে গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে রোববার পর্যন্ত টানা ৯২ দিন সেখানেই অবস্থান করেন তিনি। ৫ জানুয়ারি পুলিশের বাধায় রেব হতে না পেরে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন। গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অবরোধ এখনও চলছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৩৮ কর্মদিবসের প্রতিদিনই ছিল দেশব্যাপী হরতাল।পুলিশের হিসাব মতে, হরতাল-অবরোধের সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৯৮ জন। তাদের মধ্যে ৭৪ জন পেট্রোল বোমা ও ককটেলের আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এরা সবাই সাধারণ মানুষ। এদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। দগ্ধ হয়েছেন ২৮১ জন। সংঘর্ষে প্রাণহানি হয়েছে ১৪ জনের। ১০ জনের মৃত্যু অন্যান্য নাশকতায়। এই ২৪ জনের মধ্যে ১২ জনের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টা নেই।গত ৯০ দিনে ৩৭ জন নিহত হয়েছেন `বন্দুকযুদ্ধ`, `গণপিটুনি` ও গুলিতে। তাদের ১১ জন জামায়াত-শিবিরের। ৯ জন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। বাকিদের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।অবরোধের প্রথম মাসে নিহত হন ৫২ জন। দ্বিতীয় মাসে ৫৯ জনের। আর তৃতীয় মাসে প্রাণ গেছে ১৭ জনের। ৯০ দিনে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৮ জনে।বোমা বানাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। এছাড়া পাঁচ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। জামায়াতের দুই নেতাসহ পাঁচজন এখনও `নিখোঁজ`। তাদের পরিবারের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদের `ধরে` নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।গত ৩ জানুয়ারি থেকে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়েছে প্রায় ৭৩২টি যানবাহন। দুর্বৃত্তের আগুনে ২৩টি ভূমি অফিসসহ পুড়েছে অন্তত ৪১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া হিসাবে অবরোধের প্রথম ৬৫ দিনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আর ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই ও ডিসিসিআইর হিসাবে প্রথম ৫০ দিনেই ক্ষতি হয়েছে ৯১ হাজার কোটি টাকা।রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত চার হাজার ৯০০ কোটি টাকার উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে এক হাজার ৩১৮ কোটি, চিংড়ি ও হিমায়িত খাদ্যে ৭৪১ কোটি, কৃষিতে ৩৯৮ কোটি, পোলট্রিতে ৬০৬ কোটি, প্লাস্টিকে ২৪৪ কোটি, পর্যটনে ৮২৫ কোটি, ব্যাংক ও বীমা খাতে ১৫৬ কোটি, পরিবহন খাতে ৭৪৪ কোটি এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় ৪৪৮ কোটি টাকা।পরিবহন ব্যবসায়ীদের হিসাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের খাত। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, অবরোধের প্রথমদিকে পরিবহন খাতে দৈনিক ক্ষতি হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে ক্ষতি কমে এলেও মোট ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি বলে দাবি করেন তিনি। হরতাল-অবরোধের নাশকতায় প্রাণ গেছে ৭৪ পরিবহন শ্রমিকের। আক্রান্ত হয়েছে অন্তত এক হাজার ৪০০ যানবাহন।এসএস/এআরএস/এমএস
Advertisement