আর মাত্র দু’দিন পরেই মহান ভাষা দিবস ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এদিন স্মরণ করবে বাঙ্গালী জাতির সূর্য সন্তান ৫২-র ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। বুধবার থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, রং ও সাজ-সজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। সারা বছর অবহেলায় ও অযত্নে পড়ে থাকলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটিকে এখন যেন নতুনভাবে রূপ দেয়া হচ্ছে। সক্রিয় রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। দেশব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে এবার শহীদ মিনারকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এদিকে, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি, বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা গেছে, চলছে ধোয়া মোছার কাজ। কেউ কেউ ব্যস্ত রং করতে। তৈরি হয়েছে স্টেজ। এখন থেকে কাউকে মূল বেদীর দিকে যেতে দেয়া হচ্ছেনা। নিরাপত্তার খাতিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা আশপাশের অবস্থা অবলোকন করছেন।এছাড়া বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, রং ও সাজ-সজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। এ সময় শহীদ মিনারে কোনো সংগঠন কর্তৃক কোনো প্রকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। অমর একুশের ভাব-গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দেয়ালসমূহে কোনো ছবি, পোস্টার ও ব্যানার না লাগানোর জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।এদিকে, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটি মঙ্গলবারতাদের রুট-ম্যাপ প্রকাশ করেছে। রুট-ম্যাপ অনুযায়ী সকলকে চলার জন্য আহ্বান করেছে ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ।রুট ম্যাপ অনুযায়ী চলাচলের নিয়মগুলো হলো-জনসাধারণ পুরনো হাইকোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, বাংলা একাডেমী, টিএসসি মোড়, উপাচার্য ভবনের পাশ দিয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড়, নিউমার্কেট-ক্রসিং পার হয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর দিকের গেইট দিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করবেন এবং শহীদদের কবর জিয়ারতের পর আজিমপুর কবরস্থানের মূল গেইট (দক্ষিণ দিকের) দিয়ে বের হয়ে আজিমপুর সড়ক হয়ে পলাশী মোড় ও ফুলার রোড মোড় হয়ে অর্থাৎ সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন।কবরস্থানে না গিয়ে বিকল্প পথে যারা শহীদ মিনারে যেতে চান তারা উপাচার্য ভবন পার হয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড় থেকে বাম দিকের রাস্তা দিয়ে (জহুরুল হক হলের পশ্চিমের রাস্তা) সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।নিউমার্কেট ক্রসিং থেকে হোম ইকোনমিক্স ও ইডেন কলেজের সামনের রাস্তা দিয়েও আজিমপুর (বেবী আইসক্রীম) মোড়, পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।চাঁনখার পুল এলাকা থেকে বকশি বাজার মোড় হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়েও পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।এছাড়া, টিএসসি মোড় থেকে জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশের রাস্তা অর্থাৎ শিব বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে শহীদ মিনারে ও মেডিকেল কলেজে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। উপাচার্য ভবন গেট থেকে ফুলার রোড হয়ে ফুলার রোড মোড় পর্যন্ত রাস্তা এবং চাঁনখার পুল থেকে কার্জন হল পর্যন্ত রাস্তা জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্ত্বর ও পেছনের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে শুধুমাত্র প্রস্থান করা যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।এছাড়া, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৫ এর শৃঙ্খলা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে দোয়েল চত্বর থেকে কোন প্রকার ব্যানার, ফেস্টুন বা ফুলের তোড়া নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা শহীদ দিবস উদযাপনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দিকে প্রবেশ করা যাবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।নিরাপত্তা নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আমজাদ আলী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি ঘিরে কেউ যেন কোনো ধরনের বিশৃংখলা না করতে পারে সে জন্য কড়া নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। তাদের পাশাপাশি কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি শাখাটি।এমএএস/পিআর
Advertisement