দেশে প্রতি বছর নতুন করে ২০ লাখ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ-২০১৫ এর অনুমিত পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১০ লাখ। প্রতি বছর এ জনসংখ্যার সঙ্গে শতকরা ১ দশমিক ৩ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা।অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমছে না। ২০১১ সাল থেকে দেশে টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) ২ দশমিক ৩ এ (একজন নারী তার প্রজননকালীন সময়ে ১৫ থেকে ৪৯ বছরে যত সন্তান প্রসব করেন) স্থির হয়ে আছে। দেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় ঢাকা বিভাগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, জম্মনিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী পদ্ধতি, পরিবার পরিকল্পনার অপূর্ণ চাহিদা উচ্চহার ও তরুণ দম্পতিদের মধ্যে পদ্ধতি ব্যবহারে ধারাবাহিকতার অভাবে গর্ভধারণ ও সন্তানপ্রসব করায় টিএফআর হ্রাস করা যাচ্ছে না। ফলে জনসংখ্যা বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দাবি, জনসংখ্যা বাড়ছে না, বলার মতো না হলেও কিছুটা কমেছে!অভিযোগ রয়েছে ৮০ দশকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা যেভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জম্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারে নবদম্পতিদের জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও জম্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ করতেন বর্তমানে সেই কর্মতৎপরতা নেই।তবে কী জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে, জাগো নিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ভৌগোলিক সীমারেখা অনুসারে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হোক এটা মোটেই কাম্য নয়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দেশের সাড়ে চার কোটি কিশোর-কিশোরীকে শিক্ষিত করা, সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা, চাকরি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে এ কথা সত্য নয়। তবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা পূরণ করা হচ্ছে। এছাড়া তৃণমূল পর্যন্তও জম্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।পাশাপাশি বর্তমানে অধিদফতরের সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা (যেমন কমিউনিটি ক্লিনিক, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র) আসায় কার্যক্রম হয়তো সেভাবে চোখে পড়ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ওয়াহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নব্বইর দশকে একবার টিএফআর ৩ দশমিক ৪ এ স্থির ছিল। পরবর্তীতে ওই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়। তেমনি আগামীতে (২০১৮) বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) এর প্রতিফলন ঘটবে। তিনি আরো বলেন, টিএফআরের হিসাবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের চার বিভাগে টিএফআর ২ দশমিক ১ থেকে ১ দশমিক ৯ রয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকা, সিলেট ও চটগ্রাম বিভাগে (হাওর বাঁওড় ও দুর্গম অঞ্চল) জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির চ্যালেঞ্জসমূহ:# বাল্যবিবাহ: ৫৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে ১৮ বছরের আগে# ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সে এক বা একাধিক সন্তান ধারণ# বিবাহিত কিশোরীদের মাত্র ৪৭ শতাংশ জম্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে# আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণের হার ৫৪ দশমিক ১# পরিবার পরিকল্পনা অপূর্ণ চাহিদার হার ১২ শতাংশ # পরিবার পরিকল্পনা বিভিন্ন পদ্ধতির ড্রপ আউটের হার ১২ শতাংশ# ৬২ শতাংশ সন্তান প্রসব বাড়িতেএমইউ/এএইচ/আরআইপি/এমএফ
Advertisement