বর্তমান বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিণতিতে শহরগুলো এক ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫৮% মানুষ শহরে বাস করে। এই হার ২০৫০ সালের মধ্যে ৭০%-এ উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ এই শহরগুলোই ব্যবহার করে বৈশ্বিক শক্তির ৭৫% এবং উৎপন্ন করে কার্বন নিঃসরণের ৭০% এরও বেশি।
Advertisement
শহরগুলো একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেমন- তাপপ্রবাহ, বায়ুদূষণ, অতিবৃষ্টি ও বন্যা। ২০২৪ সাল ইতিহাসে অন্যতম উষ্ণতম বছর হিসেবে শহরগুলোর জীবনযাপন ও বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। ঢাকার মতো মেগাসিটিগুলো ঘনবসতি, বায়ুদূষণ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বহুমাত্রিক সংকটে পড়েছে। যা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরও অনিরাপদ করে তুলছে।
সমাধানপন্থার নতুন দিগন্তনগর জলবায়ু সংকট ও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় এখন সময় এসেছে। আধুনিক গবেষণা ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা দরকার। অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিনির্ধারণ ও সুশাসনের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা সম্প্রসারণ করা উচিত। কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন উদ্ভাবন ও উদ্যোগে জোর দেওয়া যায়।
ঝুঁকি প্রশমনের ছয়টি মূল থিম > শহুরে তাপমাত্রা ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ > নবায়নযোগ্য শক্তির রূপান্তর> সবুজ ও সহনশীল অবকাঠামো গঠন
Advertisement
> ভূ-স্থানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার> জলবায়ু ন্যায় ও সামাজিক সাম্য > জরুরি প্রতিক্রিয়া ও পূর্বপ্রস্তুতি।
স্থানীয় উদ্ভাবন, বৈশ্বিক প্রয়োগজলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরগুলো এখন পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। যদিও শহরগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু একইসঙ্গে তারা উদ্ভাবন ও অভিযোজনের কেন্দ্রস্থল। তাই বিজ্ঞান ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতার মাধ্যমে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। ঢাকার নগরজীবনে জলবায়ুজনিত সংকটের গভীরতা প্রতিদিনই বাড়ছে।
এ প্রেক্ষাপটে, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে ‘নগর জলবায়ু ও দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন কেন্দ্র’, যার উদ্দেশ্য গবেষণা, উদ্ভাবন ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শহরের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করা। সবচেয়ে কার্যকর সমাধানগুলো প্রায়ই আসে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে। তাই আমাদের প্রয়োজন, অভিযোজিত, বাস্তবসম্মত কৌশল, আন্তঃসংস্থাপন নেতৃত্ব এবং কমিউনিটি-নির্ভর নকশা ও পরিকল্পনা।
আজকের জটিল নগর-পরিস্থিতিতে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা কোনো বিলাসিতা নয়—এটি নীতিগতভাবে অপরিহার্য। আগামী দিনের শহরগুলোকে টেকসই, নিরাপদ এবং মানবিকভাবে সমৃদ্ধ করতে হলে সমন্বিত ও সহযোগিতামূলক অভিযোজনই একমাত্র পথ।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম