এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে বন্ধ রয়েছে শুল্কায়ন। একই সঙ্গে বন্দরে আমদানিপণ্য খালাস বন্ধ থাকায় কনটেইনারের জটলা তৈরি হচ্ছে। গত দুইদিনে বন্দর ইয়ার্ডে দুই হাজার কনটেইনার বেড়েছে।
Advertisement
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগে পৃথকীকরণ অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই গত দেড় মাস ধরে আন্দোলন করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ২৭ জুনের মধ্যে সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে অপসারণের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
তাদের এ দাবি না মানায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার (২৮ জুন) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে শুরু হয় ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। এর ফলে সারাদেশের কাস্টম হাউজ ও শুল্ক স্টেশনগুলোয় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তারই অংশ হিসেবে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কার্যক্রম। এতে স্থবির হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য। হুমকির মুখে পড়েছে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পেও।
এদিকে জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে চলছে স্থবিরতা। কাস্টমের কর্মীরা আন্দোলনে থাকায় পণ্যের শুল্কায়ন, বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ অন্যান্য কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে আমদানি কার্যক্রম স্থবির হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বন্দরের গেট ও স্ক্যানিং বিভাগে কাস্টম কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গতকাল সকাল থেকেই ডিপোগুলো থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যায়নি। ফলে সময়মতো জাহাজে পণ্য তুলে দিতে না পারায় হুমকির মুখে পড়েছে রপ্তানি।
Advertisement
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতি বিকডা’র মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, কাস্টমসের কর্মকর্তারা কাজ না করায় ডিপোর অপারেশন বন্ধই বলা চলে। আগে শুল্কায়ন হওয়া রপ্তানি পণ্য নিয়েও কাভার্ডভ্যান বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। কারণ বন্দরের প্রবেশ গেটে কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় স্ক্যানিংসহ কনটেইনার প্রবেশের অনুমতি মিলছে না। আবার ডিপোগুলোয় আসা আমদানি-রপ্তানি কোনো পণ্যের চালানেই নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কাস্টমসের কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে নতুন করে বন্দরের বার্থে জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ থাকবে না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দর কাস্টমসের পণ্যের কাস্টডিয়ান। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি শুল্কায়ন না করে তাহলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের স্থবিরতা কাটবে না। কাস্টমসের যাচাই কাজ বন্ধ থাকায় শনিবার থেকে রপ্তানিপণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরের ভেতর ঢুকতে পারেনি।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়েছে ১৮৬০ টিইইউস। শনিবার ছিল ৩৮ হাজার ৮৬২ টিইইউস। রোববার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৭২২ টিইইউস-এ। রোববার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কনটেইনার বন্দরে নেমেছে ৫০৪৮ টিইইউ’স, ঢাকা আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে এসেছে ১৩৯ টিইইউ’স।
Advertisement
অফডকগুলো থেকে রপ্তানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার এসেছে ১০৮৮ টিইইউ’স এবং খালি কনটেইনার এসেছে ১৭০৯ টিইইউ’স। একইভাবে ৩০৬৬ টিইইউ’স কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে। ৮৩ টিইইউ’স কনটেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় অফডকগুলোতে আমদানিপণ্য ভর্তি কোনো কনটেইনার পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে বন্দর থেকে ১৩১৫ টিইইউ’স খালি কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে। ৬২ টিইইউ’স আমদানিপণ্যবাহী কনটেইনার অনচেচিজ সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর অভ্যন্তর থেকে ৭৭ টিইইউ’স কনটেইনার পণ্য খালাস দেওয়া হয়েছে।
এমডিআইএইচ/এমআইএইচএস/এমএস