ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্কহার ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করেছে, যা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ছিল। নতুন এ হার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ সামনে কী করতে পারে? এই হার আরও কমানোর জন্য আমাদের আর কি কোনো বিকল্প বা সুযোগ আছে?
Advertisement
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে শুল্ক প্রসঙ্গে এ প্রশ্ন তোলেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
বিকল্প বা সুযোগ কি আসলেই আছে?
হ্যাঁ– কারণ ৯ জুলাই একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যদিও নতুন শুল্ক হারটি ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এখনো আলোচনার মাধ্যমে এই হার আরও কমানোর চেষ্টা করতে পারে। তবে আমার মনে হয়, কর কমানোর বিষয়ে আমাদের আলোচনার ধরন এবং দাবিগুলোর যৌক্তিক ভিত্তি তাদের প্রত্যাশার মতো সুনির্দিষ্ট ও সুসংগঠিত ছিল না।
Advertisement
খুব বেশি কিছু আশা করার সুযোগ কোথায়? বা কোনো ভিত্তি আছে কি?
ট্রাম্প প্রশাসনের একটা একগুঁয়েমি আছে। কিন্তু আমাদের দিক থেকে আমরা কি প্রস্তুত ছিলাম? আমার মনে হয়, আমাদের প্রস্তুতিটা খুব একটা গোছালো ছিল না। হ্যাঁ, প্রস্তুতি ছিল। সবই অ্যাডহক। সুচিন্তিত বলে মনে হয়নি। বিষয়টা এমন ছিল যে আমরা ট্যাক্স কমিয়ে দেবো, তাদের থেকে গম কিনবো, তুলা কিনবো কিংবা উড়োজাহাজ কিনবো।
যুক্তরাষ্ট্র যে গাইডলাইন দিয়েছিল বা যা প্রত্যাশা করেছিল, আমরা সেই লাইনে কি ছিলাম? ওদের খেলায় তো আপনাকে ওদের মতো খেলতে হবে, খেলার ভেতরেই ডিফাইন করা ছিল তারা কী চায়
আরও পড়ুন
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্র যে গাইডলাইন দিয়েছিল বা যা প্রত্যাশা করেছিল, আমরা সেই লাইনে কি ছিলাম? ওদের খেলায় তো আপনাকে ওদের মতো খেলতে হবে, খেলার ভেতরেই ডিফাইন করা ছিল তারা কী চায়। ইউনাইটেড স্টেট্স ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) গাইডলাইনে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে সব বিষয় ছিল, সে সব আইটেম ধরে ধরে আমাদের অবস্থানটা পরিষ্কার করা উচিত ছিল এবং আমাদের প্রোপোজাল দেওয়া উচিত ছিল।
আমাদের কী ধরনের প্রস্তুতি ছিল বলে মনে করেন?
তারা শুধু ট্যারিফ নিয়ে কথা বলেনি। তারা অশুল্ক বাধা, মেধাস্বত্ব (আইপি) অধিকার, ব্যবসা পরিচালনার সহজতা, দুর্নীতি হ্রাস এবং বিদেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আরও বিনিয়োগবান্ধব করার মতো ও সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছে—এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ইস্যুগুলো আলোচনায় কতটা গুরুত্ব পেয়েছে বা আমরা এগুলো উন্নয়নের জন্য কী ধরনের প্রস্তাব পেশ করেছি? কিন্তু এ বিষয়গুলো তুলে ধরে একটা গোছালো প্রস্তুতি কিন্তু আমি দেখিনি।
একটা কথা শুনে আমার খুবই অবাক লাগছে যে, আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধারণা যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ছাড় দেবে। আসলে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে মনে করে না। আমেরিকা আমাদের কখনো এলডিসি হিসেবে ছাড় দেয়নি। আমার ধারণা, যে ধরনের লোক এ বিষয়টা দেখভাল করার জন্য রাখা দরকার ছিল এবং যাদের জানাশোনা আছে তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়নি। কিছু অতি চতুর মুখ, যারা শুধু বলেন বা বলতে পারেন তাদেরই রাখা হয়েছে।
একটা কথা শুনে আমার খুবই অবাক লাগছে যে, আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধারণা যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ছাড় দেবে। আসলে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে মনে করে না। আমেরিকা আমাদের কখনো এলডিসি হিসেবে ছাড় দেয়নি
ট্রাম্প প্রশাসনের একগুঁয়েমি আছে, এটা ঠিক কিন্তু আমাদের দিক থেকে আমার মনে হয় না যে প্রস্তাবগুলো সুচিন্তিত ছিল। এবং একটা প্রস্তুতি নিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছিল।
নতুন করে এই ইস্যুগুলো কি আবার আমরা প্রস্তুতি নিয়ে তুলে ধরতে পারি, সুযোগ আছে?
সুযোগ তো সব সময় থাকে। আগস্ট পর্যন্ত যে ডেডলাইন দিয়েছে তার পরেও যে সুযোগ থাকবে না তা তো নয়। ওখানে তো চিঠিতে বলা আছে যে, তোমরা যদি তোমাদের বাজার খুলে দাও তাহলে আমরাও কী করতে পারি তা দেখবো।
কিন্তু সময় অনেক আছে এমন নয়, আমাদের দ্রুত ভাবতে হবে, কোথায় আমরা দুর্বল এবং কী করার আছে। আমাদের প্রতিযোগীরা যেমন ভিয়েতনাম অনেক ভালো করছে। তবে আশার কথা আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও চীন এখনো ঠিক করতে পারেনি। আমরা সেটার প্রতি নজর রাখতে পারি এবং প্রস্তুতি নিতে পারি।
সুযোগ তো সব সময় থাকে। আগস্ট পর্যন্ত যে ডেডলাইন দিয়েছে তার পরেও যে সুযোগ থাকবে না তা তো নয়। ওখানে তো চিঠিতে বলা আছে যে, তোমরা যদি তোমাদের বাজার খুলে দাও তাহলে আমরাও কী করতে পারি তা দেখবো
সোমবার (৭ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪টি দেশের পণ্যে নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেন। এতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে এই চড়া শুল্ক।
ঘোষণার পরপরই, বিশ্বব্যাপী কার্যকর হতে যাওয়া রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৯ জুলাই এ স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার আগেই ৩৫ শতাংশ শুল্কও নির্ধারণ করেন।
আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/এমএস