‘ঘ্রাণ থাকে গন্ধে, বর্ণে নয়’—এ স্লোগান হৃদয়ে ধারণ করে একতার গল্প নিয়ে যাত্রা শুরু ‘দেওয়ালচিত্রে হরিজনদের সাহসের গল্প’। এ আয়োজন শুধু প্রকল্প নয়, এটি সাহসী নারীদের কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদের ভাষা এবং পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। বলা অনিবার্য—কিছুদিন আগেই কলম্বোতে আয়োজিত ‘ফিয়ারলেস অ্যাম্বাসেডরশিপ’ প্রকল্পে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে এলেন বগুড়ার চিত্রশিল্পী আহসানা অঙ্গনা।
Advertisement
দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের শিল্পের মাধ্যমে শক্তি ও প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরতে এ উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয় ভারতীয় শিল্পী শিলো শিভ সুলেমানের হাত ধরে, নির্ভয়া ঘটনার পর ২০১২ সালে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বাচিত ১৫ জন নারী শিল্পীর সঙ্গে আহসানা অঙ্গনা অংশ নেন কলম্বোর এক কর্মশালায়। সেখানে তাদের জীবনের গল্প, সংগ্রাম ও স্বপ্নের আলোকে স্ব-প্রতিকৃতি আঁকার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়।
এরপর স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে, তাদের জীবনের লড়াই ও অভিজ্ঞতা আত্মস্থ করেন শিল্পীরা। সেই সূত্র ধরেই এবার বাংলাদেশের বগুড়ায় আয়োজন করা হয়েছে। কলম্বো থেকে বগুড়ায় আসেন অঙ্গনা। আয়োজনের অংশ হিসেবে ২৫ জুন ‘আমাদের গল্পের ছাপ’ শিরোনামে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আমরা একসাথে হাঁটতে চাই আমাদের ভেতরের গল্পের পথে; যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ হবে শান্তির, প্রতিটি ছাপ হবে সহযাত্রার। এভাবেই শুরু হয় ‘আমাদের গল্পের ছাপ’ বিষয়ক কর্মশালা। সঙ্গীর সঙ্গে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে শুভ্র কাপড়ের ওপর—পায়ে লাল রং মেখে শুভ্র কাপড়ে এক একটি স্মরণীয় পদচিহ্ন রেখে অগ্রসর হয়। শান্ত সংগীতের সুরে তালমিলিয়ে সবাই পায়ে রং মেখে সাদা কাপড়ে হেঁটে জীবনের গল্পের শুরু করেন, এ গল্প অগ্রসর হওয়ার গল্প।
Advertisement
প্রত্যেকে হাতে একটি করে দীপ নিয়ে অগ্রসর হয় নিভে থাকা দীপসমূহের দিকে, একটি করে জ্বালিয়ে আলোয় নির্মাণ করে স্পন্দনশীল পরিবেশ। আলোর নিচে একটি কথা, একটি অভিপ্রায়। পদচিহ্ন দিয়ে আলোর সঞ্চারে পরিসরকে উষ্ণ করে তোলে। নিজেদের গল্প শেষে মাটি শুকোলে তাতে সোনালি রঙের প্রলেপ লাগানো হয়। যেখানে ফাটল; সেখানেই জয়গাথা। ভাঙা মানেই শেষ নয় বরং নতুন সৌন্দর্যের শুরু। যাত্রা এখানেই শেষ নয়, এ কেবল শুরু।
আজকের দিনটি আমাদের গল্পের সাক্ষী, আমাদের যাত্রার চিহ্ন, আমাদের একত্রিত হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি। এভাবেই শেষ হয় ‘আমাদের গল্পের ছাপ’ বিষয়ক কর্মশালা। এখানেই শেষ নয়, শেষ মানেই আবার শুরু—আজ থেকে হরিজন সম্প্রদায়ের গল্পকথার ‘ম্যুরাল’ আঁকা হবে। যা ২৯ জুন পর্যন্ত চলবে। ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে। প্রতিটি শিল্পী তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলবেন সাহস, প্রতিরোধ ও আশার গল্প।
তাদের সৃজনশীলতায় ফুটিয়ে তুলবেন সমাজ, প্রকৃতি ও নারীর সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। আহসানা অঙ্গনা কথা দিয়েছিলেন তিনি দেশে ফিরেই বগুড়ায় এমন এক শিল্পকর্ম গড়ে তুলবেন। তার লক্ষ্য নারী কেন্দ্রীক কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জীবনের অজানা গল্পগুলো দেওয়ালচিত্রে রূপ দেওয়া, যাতে সমাজের সব স্তরের মানুষ অনুপ্রাণিত হতে পারেন।
কথা রাখলেন অঙ্গনা ‘ঘ্রাণ থাকে গন্ধে, বর্ণে নয়’র মাধ্যমে। এটি শুধু প্রকল্প নয়; সাহসী নারীদের কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদের ভাষা এবং পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। আহসানা অঙ্গনার এ উদ্যোগ বাংলাদেশের শিল্প ও সমাজের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম