অর্থনীতি

এক টাকার কাজ ২০ টাকায় হয়েছে, তাও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প

এক টাকার কাজ ২০ টাকায় হয়েছে, তাও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প

দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রচুর অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি এ অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিষয়টি সাধ্যের বাইরে গাড়ি কেনার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘কেউ যদি একটা গাড়ি কেনেন, তার মনে প্রথম প্রশ্ন হয় যে তার মাইলেজ কী হবে? রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আমরা যে গাড়ি কিনেছি, তাতে সে প্রশ্ন কখনো আসেনি। ওই গাড়ির তেল আধারাস্তায় গিয়ে শেষ হয়ে যায়।’

Advertisement

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কর্ণফুলী টানেল বানাবো, পদ্মা সেতু, রেল সেতু, এমআরটি প্রকল্প বানাবো, কাকে দেখানোর জন্য এগুলো? এই তেল দিয়ে কত কিলোমিটার যেতে পারবো-সেটা ভাবা হয়নি। বরং এমন গাড়ি কিনলাম যে এরপর তেল কেনার জন্য ভিক্ষা করতে গেলাম রাস্তায়। আইএমএফের কাছে গেলাম, এর কাছে গেলাম, ওর কাছে গেলাম- এটা কি উন্নয়ন?’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা আগে বৃদ্ধি করতে হবে। এরপর টেকসই উন্নয়ন। আগে এক টাকার কাজ ২০ টাকায় হয়েছে, তাও সম্পূর্ণ আপ্রয়োজনীয় প্রকল্পেও। আমাদের যে ভুলগুলো হয়েছে, সেটা ঠিক করতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’

বুধবার (২৫ জুন) অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘অটোমোবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

Advertisement

ইআরএফ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে ও ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক এবং উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ।

এ সময় উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এ দেশের ভোগ্যপণের বাজার ১৫০ বিলিয়ন ডলারের। বছরে ১০ কোটি টন খাদ্য আমদানি হয় বিদেশ থেকে। কিন্তু এগুলোর জন্য আমাদের লজিস্টিক নেই। বাংলাদেশের আমাদের লজিস্টিক খরচ সবচেয়ে বেশি, যা উন্নত বিশ্বে যে কোনো দেশের চেয়েও বেশি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের সব গঞ্জ দিয়ে নাম করা এলাকাগুলো একসময় লজিস্টিক হাব ছিল। কিন্তু সেগুলো বিকল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সম্পদ ছিল সেগুলো। এ দেশে ২০০ নদী আছে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার। সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে অসম্ভব সুন্দর ভবিষ্যত আসবে আমাদের।’

‘তবে আমাদের আটোমোবাইল খাত গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটা সবসময় ছোট অংশীদার হয়ে আছে। একসময় গাড়ি উৎপাদনের নামে পুরো বডি বিদেশ থেকে এনে চারটা চাকা লাগিয়ে প্রশংসা নেওয়া হয়েছে। বিগত ১৬ বছরের ওইসব অসামঞ্জস্যতা উত্তরণ করতে এখন সুষ্ঠু নীতি করতে হবে।’

Advertisement

সেমিনারে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এ দেশে পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা খুব বড় সমস্যা। যতক্ষণ সেটা সমাধান না হবে পরিবেশ ও দেশের লজিস্টিক খাতে খরচ কোনোভাবে কমবে না। এ জায়গায় উন্নতি কিন্তু সহজ নয়, বড় পলিসি দরকার।’

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘দেশের গণপরিবহন উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। দেশের উন্নতি তখন বোঝা যাবে, যখন বড় বড় গাড়িতে চড়া লোকজন সাধারণ গণপরিবহনে যেতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর আমরা দেখছি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বারবার পলিসি চেঞ্জ করছে। এতে ব্যবসায় স্থিতি থাকে না। যখন কোনো পলিসি পরিবর্তন হয়, তখন শুধু ব্যবসায়ীদের কথা শোনা হয়, কিন্তু পলিসি হয় তাদের সুবিধা বিবেচনা করে। এ ক্ষেত্রে সরকার বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দিতে চায় না, যা বৈরী নীতি।’

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক বলেন, ‘কিছু পলিসির কারণে এখন আমরা জাপান ছাড়া অন্য কোথাও থেকে গাড়ি আনতে পারছি না। এখনো ছোট গাড়ি ট্যাক্স বেশি, এটা কমালে কিন্তু রাজস্ব আয় কমবে না বরং আমদানি বেড়ে রাজস্ব বাড়বে। সাধারণ ক্রেতাও গাড়ি কিনতে পারবে।’

উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ‘দেশে গাড়ি সংযোজনে ভ্যালু এডিশন হচ্ছে না। বাংলাদেশের যে অটোমোবাইল পলিসি রয়েছে, সেটা তখনকার এনবিআর নিজেদের মতো চেঞ্জ করে জটিল করে রেখেছে। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি।’

এনএইচ/বিএ/এএসএম