কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে ভেসে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তিন শিক্ষার্থীর মাঝে নিখোঁজ অরিত্র হাসানের সন্ধান মেলেনি চারদিনেও।
Advertisement
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফ-বাহারছরা, হিমছড়ি, সোনাদিয়া, নাজিরারটেক, মহেশখালী-বাঁকখালীর মোহনাসহ সাগর উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় স্পিডবোটে খোঁজ চালানো হয়। কিন্তু কোথাও তার দেহ মেলেনি। এর আগে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারও একইভাবে উপকূলে উপকূলে খোঁজ চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম।
তার খোঁজ না পেয়ে নিরাশ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সী সেইফ লাইফগার্ডের সিনিয়রকর্মী মোহাম্মদ ওসমান কোথাও কোনো মরদেহ দেখা গেলে জানানোর অনুরোধ করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে কক্সবাজারের হিমছড়ি সমুদ্রসৈকতে পানিতে নেমে নিখোঁজ হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তিন শিক্ষার্থী কে এম সাদমান রহমান সাবাব, অরিত্র হাসান ও আসিফ আহমেদ। এর মাঝে নিখোঁজের কয়েক ঘণ্টা পর সাবাবের মরদেহ উদ্ধার হয়। নিখোঁজ ছিলেন বাকি দুজন। বুধবার সকালে আসিফ আহমেদের মরদেহ ভেসে ওঠে। এখনো নিখোঁজ অরিত্র হাসান।
Advertisement
একসঙ্গে ঘুরতে গেলেও পানিতে না নামায় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান দুই সহপাঠী ফারহান ও রিয়াদ।
সাবাবের মরদেহ মঙ্গলবার রাতে আর বুধবার সন্ধ্যায় আসিফের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাবাবের বাড়ি ঢাকার মিরপুরে। আসিফ ও অরিত্রের বাড়ি বগুড়ায়।
নিখোঁজ-নিহতদের সহপাঠী ফারহান বলেন, শুরুতে কারোরই বিচে নামার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু সাবাব নেমে পড়লে তার দেখাদেখি আসিফ, অরিত্রও নেমে যায়। শুরুতে ঢেউ বেশি ছিল না, কিন্তু হঠাৎ বড় ঢেউ আসতে শুরু করলে তারা উঠে আসার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনি।
কক্সবাজারের এডিএম ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহিদুল আলম বলেন, নিখোঁজ অরিত্রকে পেতে বুধ ও বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও সারাদিন সাগরের বিভিন্ন উপকূলে সন্ধান চালানো হয়েছে। স্পিডবোটে লাইফ গার্ড, বিচকর্মীসহ অন্যরা মিলে সোনাদিয়া, মহেশখালী চ্যানেল, টেকনাফ, বাহারছরাসহ সাগরতীরের সম্ভাব্যসব জায়গায় খোঁজ করা হয়। না পেয়ে সন্ধ্যায় সন্ধান চালানো টিম ফিরে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হয়েছে, কোথাও মরদেহটি দেখা মিললে যেন জানানো হয়।
Advertisement
স্রোতের টানে ভেসে ২০২৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান পাঁচজন পর্যটক। এর আগের ৬ বছরে একইভাবে মারা গেছেন ৪৯ পর্যটক। সদ্যগত কোরবানির ঈদে কলাতলী সৈকতে গোসলে নেমে রাজশাহীর শাহিনুর রহমান (৫৮) ও সিফাত রহমান (২০) নামের পর্যটক বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়। তারাসহ এ সময়ে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে মারা যান ৬ জন। তাদের মাঝে তিনজন পর্যটক, একজন স্থানীয়। অপর দুজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। মঙ্গলবার চবির শিক্ষার্থী মিলে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উচ্ছ্বাসে নিয়ম ভাঙায় সাগরে পর্যটক মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিমত বোদ্ধামহলের।
সায়ীদ আলমগীর/এমএন/এএসএম