লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে মোতাবেক আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
Advertisement
তবে নির্বাচনের আগেই মাঠ প্রশাসনকে নতুনভাবে সাজানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে সরকারের, যেন সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী বহুল প্রতীক্ষিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়া যায়।
এজন্য যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সরকার এখনো প্রত্যাহার করেনি। একই সঙ্গে আরও যেসব ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে- তাদের বিষয়ে এখনো সেভাবে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে মাঠ প্রশাসনে ডিসিদের উঠিয়ে আনা এবং নতুন ডিসি পদায়নের ক্ষেত্রে নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। মোটামুটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ডিসি পদে রদবদলের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। নতুন ডিসি নিয়োগে এরই মধ্যে ফিটলিস্টও তৈরি করা হয়েছে। যদিও জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির অনুমোদনেই ডিসি পদে রদবদল আনতে হবে।
Advertisement
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম-সচিব ও তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রধান করে গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি করে সরকার। এ কমিটির মতামত ছাড়া ডিসি পদে রদবদল করা যাবে না।
আরও পড়ুন ডিসি নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের যে সাজা হতে পারে, কী আছে আইনে এবার ৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরগত ২০ মার্চ ১৯৬ জন উপসচিবকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। তাদের মধ্যে ২১ জন ডিসি ছিলেন। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এই ডিসিদের এখনো সরানো হয়নি। কারণ, ডিসি পদটি উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের। সাধারণত যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির পর তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে ডিসি পদায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একক কর্তৃত্ব না থাকায় জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। এ কমিটি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসনের জেলা প্রশাসক পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডিসিরাই ভোটের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই দল নিরপেক্ষ হিসেবে বর্তমান সরকার চাইবে- ডিসি পদে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে। সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করছে।
Advertisement
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তখন এত যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ এবং সময় কোনোটাই ছিল না। কিন্তু ভোটের আগে সরকার যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি করবে। এক্ষেত্রে যারা উপযুক্ত নন তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২১ জন ডিসি অপেক্ষার প্রহর গুনছেন, কখন তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। পদোন্নতির পর নিশ্চিত বদলির চিন্তায় তাদের আসলে সেভাবে কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই ভোটের আগে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন। ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে ডিসি নিয়োগ দিতে তাদের ফিটলিস্টও তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব রেডি আছে। শিগগির উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি সভায় বসবে। সভায় সার্বিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
আরএমএম/এমকেআর/এএসএম