দেশজুড়ে

ফখরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের দেলাওয়ার, আছেন স্বতন্ত্ররাও

ফখরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের দেলাওয়ার, আছেন স্বতন্ত্ররাও

আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা-তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশ এখন নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিগত সব নির্বাচনের চেয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ভিন্নভাবে। এই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে সবচেয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘরের আসনে বরাবরই এগিয়ে আছেন তিনি। দলের কৌশলগত অন্য কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন যে তিনিই পাচ্ছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ আসনে তাকে লড়তে হবে জামায়াতের দেলাওয়ার হোসেনের সঙ্গে। সেই সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে লড়তে চান স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। তারা মনে করছেন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার হলে হেভিওয়েটদের সঙ্গে লড়তে তাদের মনোবল আরও চাঙ্গা হবে।

Advertisement

ঠাকুরগাঁওয়ে মোট তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও-১ সদর আসনে এরই মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্য কোনো দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি। পরিবেশ বুঝে মাঠে নামার আগ্রহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও।

আওয়ামী লীগের শাসন আমলে ব্যাপক নির্যাতিত নেতা দেলাওয়ার হোসেন এবার এ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করবেন। এরই মধ্যে নির্বাচনের মাঠে সরব তিনি। এবার ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেও ব্যাপক জনসংযোগ করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য দেলাওয়ার। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে সদর আসনের প্রতিটি জায়গা চষে বেড়াচ্ছেন শিবিরের সাবেক এ কেন্দ্রীয় সভাপতি। মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধেও জয়ের প্রত্যাশা করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের বর্তমান সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে সরব পাওয়া যায়।

এখানে সংখ্যালঘু ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার। তরুণ ভোটার ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৭। এই আসনে কোনো প্রার্থীকে জিততে হলে তরুণ ও সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

নির্বাচন এগিয়ে আনার বার্তা দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ: ফখরুল ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে সংস্কার ও জুলাই সনদ: আমীর খসরু

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশজুড়ে আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত তিনি। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য ফ্যাসিস্ট শাসন আমলে নির্যাতন ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী তিনি। জেলার দলীয় নেতাকর্মীরা এরইমধ্যে এই নেতাকে নির্বাচিত করতে মাঠে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন এবং নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রচারণাও চালাচ্ছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

এই সদর আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এখনো তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে আগ্রহী একাধিক প্রার্থী। হেভিওয়েটদের সঙ্গে ভোটে লড়তে চান তারা।

Advertisement

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের শাসন আমলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করেছি। আপনারা জানেন আমাদের ঠাকুরগাঁও কতটা সম্ভাবনাময় একটি জেলা। এখানকার শান্তিপ্রিয় মানুষকে বিগত দিনে কতটা পিছিয়ে রাখা হয়েছে। এটি এখনো অনুন্নত একটি জেলা, পিছিয়ে পড়া জেলা। আমাদের এ জেলাকে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। আমরা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা চাই। যেন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তৃপ্তি পায়।

আরও পড়ুন

রমজানের আগে ভোট আয়োজনের প্রস্তাব তারেক রহমানের ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো জামায়াত

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এই আসনের হেভিওয়েট এ সম্ভাব্য প্রার্থী বলেন, জয় তো প্রার্থীর হয় না। জয় হয় ভোটারের। ভোটাররা যদি নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার সঙ্গে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেটাই হবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয়।

জয় তো প্রার্থীর হয় না। জয় হয় ভোটারের। ভোটাররা যদি নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার সঙ্গে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেটাই হবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয়।-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সদর আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঘোষণা দেওয়া প্রার্থী মো. দেলাওয়ার হোসেন বলেন, অনেক নির্যাতিত মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এবং অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এ নতুন বাংলাদেশে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাঙ্ক্ষিত সমাজ বিনির্মাণ করতে আমি সবাইকে পাশে চাই। সেই সঙ্গে আমার জেলার যত সম্ভাবনা আছে সব দ্বার উন্মুক্ত করতে চাই। যুবসমাজ বেকারমুক্ত হলে ঠাকুরগাঁওকে উন্নত জেলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমি সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে আমাদের আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা নিয়ে যাচ্ছি এবং আমার পাশে থাকার দাওয়াত দিচ্ছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে একটি সুন্দর সাজানো গোছানো শান্তিপূর্ণ জেলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য দেলাওয়ার হোসেন-ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে আত্মপ্রকাশ করাতে চান বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষার জাতীয় কমিটির ঠাকুরগাঁওয়ের সদস্যসচিব ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহাবুব আলম রুবেল। গরিব মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে খ্যাত তিনি। শহরে-গ্রামে মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে রাজপথে সোচ্চার থাকেন তিনি।

সম্ভাব্য এ প্রার্থী বলেন, ‘আমি বিগত দিনে নিজে কখনো ভোট দিতে পারিনি। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন ভোটের পরিবেশ বিগত নির্বাচনগুলোতে কখনোই এ দেশে ছিল না। আমি পুরোনো সেই আতঙ্কের, হুমকির, নিরাপত্তাহীনতার নির্বাচন চাই না। যদি ইসি প্রকৃতপক্ষে সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন চায় তবে জনগণের চাওয়া মাথায় রাখতে হবে। নির্বাচনের বিষয়ে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তার বাস্তবায়ন চাই। কারণ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর পরই আমার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। যে কেউ যেন প্রার্থী হতে পারে সে সুযোগটা আগামীর নির্বাচনে থাকতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির লোক সংসদে প্রতিনিধি হবে। সবার কথা সংসদে বলার মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবে আমরা এমন সংস্কার চাই।’

আরও পড়ুন

গণতন্ত্র ফেরাতে দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি: আমীর খসরু সরাসরি ভোটে সংসদে ১০০ নারী এমপি প্রয়োজন: সারজিস

এছাড়া এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান বোদ্ধা মহলের অনেকেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাওয়া হলো নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার বাস্তবায়ন হলে কেবল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে আশার আলো দেখতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থা এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি প্রার্থী হতে পারে। এক্ষেত্রে জামানতের দিকে বিশেষভাবে সংস্কারের জন্য নজর দিতে হবে। যখন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে তখনই কেবল সব সম্প্রদায় ও সব মানুষের একটি কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন সম্ভব। নয়তো পুঁজিবাদের দখলে থাকবে নির্বাচন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হতাশ হবে। আমরা চাই সংস্কারের মধ্য দিয়ে এমন একটি সংসদীয় ব্যবস্থা থাকবে যেন সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সংসদে যেতে পারে এবং কথা বলতে পারে। এরইমধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও গ্রহণ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

আমি সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে আমাদের আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা নিয়ে যাচ্ছি এবং আমার পাশে থাকার দাওয়াত দিচ্ছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে একটি সুন্দর সাজানো গোছানো শান্তিপূর্ণ জেলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।-দেলাওয়ার হোসেন 

ঠাকুরগাঁও জেলার নির্বাচন অফিসার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমরা ইসির নির্দেশনা মতো কাজ করছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে জনগণ তথা ভোটারের শতভাগ আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।

ভোটারদের পরিসংখ্যান

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬০৯। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪০ হাজার ৯৮৩। নারী ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬২২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার চারজন।

এখানে সংখ্যালঘু ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার। তরুণ ভোটার ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৭। এই আসনে কোনো প্রার্থীকে জিততে হলে তরুণ ও সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানতে হবে।

বিগত সংসদ নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছেন

জাতীয় সংসদের ৩নং এই আসনে বিগত সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা হলেন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির খাদেমুল ইসলাম। ১৯৮৮ সালে জাপা থেকে রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী। ১৯৯১ সালে খাদেমুল ইসলাম জয় লাভ করেন আওয়ামী লীগ থেকে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে খাদেমুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালের উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন রমেশ চন্দ্র সেন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের টিকিটে জেতেন রমেশ চন্দ্র সেন।

টিএইচটি/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম