পাঁচ বছর কেটে গেলেও শেষ হয়নি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শালিখা সেতুর নির্মাণ কাজ। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কাজ শুরু করেও গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জিয়াউল ট্রেডার্স’। ফলে কপোতাক্ষ নদের ওপর এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই পাড়ের লাখো মানুষের।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর কপোতাক্ষ নদের ওপর শালিখা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল ৮০ মিটার দীর্ঘ একটি মূল সেতু ও ৪৪ মিটার ভায়াডাক্ট। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও যন্ত্রপাতি হঠাৎ করেই সাইট থেকে উধাও হয়ে যায়। ফলে তালা ও পাইকগাছার মানুষ এখন বাঁশের দুর্বল সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হচ্ছেন। এতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চলাফেরায় ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের কলেজছাত্র আফজাল হোসেন বলেন, পাঁচ বছরেও যদি একটি সেতু শেষ না হয় তাহলে দায় কার? প্রতিদিন আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তালার মুড়াগাছা গ্রামের কলেজশিক্ষক আওয়াল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন এই বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে কলেজে যেতে হয়। একটু অসাবধান হলেই নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়। সময়ের অপচয় তো আছেই, তার চেয়েও বড় বিষয় এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা আমাদের মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত ভীত করে তোলে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো আসতে পারে না। অনেক সময় ক্লাস বাতিল করতে হয়। একটি সেতুর অভাবে পুরো একটি অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থাই স্থবির হয়ে পড়েছে।’
Advertisement
লাড়ুলি গ্রামের গৃহবধূ ফারজানা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাঁকোটা এতটাই সরু আর দুর্বল যে, একটু পা পিছলে গেলেই নদীতে পড়ে যেতে পারে যে কেউ। বাচ্চার হাত শক্ত করে ধরে রাখি, কিন্তু ভয় তো কাটে না।’
পাইকগাছার বাকা গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কষ্ট করে ফসল ফলাই। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে পড়ি সবচেয়ে বড় বিপদে। নদী পার হতে হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে। সেখানে ট্রলি তো দূরের কথা, হেঁটে চলাই মুশকিল।’
রোগীদের দুর্ভোগ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ মোজাফফর আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘একবার অসুস্থ হয়ে তালায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। সাঁকো পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এখন আর সাহস করি না।’
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিয়াউল ট্রেডার্সের প্রতিনিধি আবুল হোসেন বলেন, বিল ছাড় না পাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিতে পারিনি। ফলে তারা কাজ ছেড়ে দেন। এলজিইডি থেকে অর্থ পেলে আবার কাজ শুরু হতে পারে।
Advertisement
তালা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব জানান, শালিখা সেতুর কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়েও তার পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বাতিলের সুপারিশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।
তিনি বলেন, ঠিকাদার যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরে না আসেন, তাহলে নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান করে বাকি কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, সেতুটি দুই জেলার সংযোগ স্থাপনকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি শিগগির কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ঠিকাদার যদি কাজ শেষ না করেন, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। জনগণের কষ্ট দীর্ঘায়িত হবে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/এমএস