দেশজুড়ে

নিয়োগকর্তা কারাগারে গেলেও বহাল তবিয়তে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা!

নিয়োগকর্তা কারাগারে গেলেও বহাল তবিয়তে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অবৈধ নিয়োগের অভিযোগে দুদকের মামলায় নিয়োগকর্তা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার কারাগারে গেলেও ‘অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া’ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। দুদকের ওই মামলায় চার্জশিটভুক্ত হওয়ার পর বিধান অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। গত ১৬ জুন এই মামলায় যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তারকে কারাগারে পাঠান আদালত।

Advertisement

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে অবৈধভাবে নিয়োগ এবং এর মাধ্যমে সরকারি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট মামলা করেন দুদক যশোরের তৎকালীন উপ-পরিচালক আল-আমিন। নিয়োগে সংশ্লিষ্টতার কারণে সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাবেক উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন এবং নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আব্দুর রউফকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে উল্লিখিতদের অভিযুক্ত করে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।

চার্জশিট দাখিলের পর গত ১৬ জুন মামলার ধার্য তারিখে হাজির হয়ে ড. আব্দুস সাত্তার জামিনের আবেদন জানান। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে যবিপ্রবি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে দুদকের মামলায় নিয়োগকর্তা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার কারাগারে গেলেও ‘অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া’ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। তিনি এখন যবিপ্রবির উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে কর্মরত। অথচ চাকরি বিধি অনুযায়ী, চার্জশিটভুক্ত হওয়ায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথা। কিন্তু ‘তদন্ত কমিটির’ অজুহাতে তাকে দায়িত্বে বহাল রাখা হয়েছে।

Advertisement

এ ব্যাপারে দুদকের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুদকের এই মামলায় আব্দুর রউফও চার্জশিটভুক্ত আসামি। আর দুদকের মামলায় চার্জশিটভুক্ত হলে সার্ভিস রুল অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে।

এ ব্যাপারে যবিপ্রবির আইন কর্মকর্তা মাহমুদ আশরাবী নিশানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আব্দুর রউফের ব্যাপারে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না তা তার জানা নেই।

তবে এ ব্যাপারে যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ জানান, অবৈধ নিয়োগ-দুর্নীতির ওই মামলায় আব্দুর রউফ জামিনে রয়েছেন। আর বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এজন্য এখনও তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে ওই মামলায় আব্দুর রউফ চার্জশিটভুক্ত কি না, আর এক্ষেত্রে আইনের কী বিধান রয়েছে তা তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

দুদকের ওই মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে আবেদন করেন আসামি আব্দুর রউফ। নিয়োগের জন্য গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট বাছাই বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন উপাচার্য ড. আব্দুস সাত্তার। বাছাই বোর্ডের আর এক সদস্য ছিলেন ইবির উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন। একই বছরের ২২ আগস্ট মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এসময় আরও তিন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু কাউকে পাস করানো হয়নি। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে আব্দুর রউফের কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বাছাই বোর্ড অবৈধভাবে তাকে প্রথমে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাকে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। রিজেন্ট বোর্ড সভাপতি হিসেবে সাবেক ভিসি ড. আব্দুস সাত্তার উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাকে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।

Advertisement

আব্দুর রউফ সেকশন অফিসার পদে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় সিলেকশন গ্রেডসহ বিভিন্ন সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে বিভাগীয় প্রার্থীর সুবিধা নিয়ে ২০১৪ সালে সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে এবং ২০২১ সালে উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। অবৈধ নিয়োগের কারণে ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তিনি বেতন-ভাতা বাবদ মোট ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচআরএম/এফএ/জেআইএম