দেশজুড়ে

পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন সড়কের নির্মাণকাজে ধীরগতি, ভোগান্তি চরমে

পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন সড়কের নির্মাণকাজে ধীরগতি, ভোগান্তি চরমে

নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের জন্য যেন গলার কাঁটা হিসেবে পরিণত হয়েছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন বিশিষ্ট সড়কের নির্মাণকাজ। কাজের ধীরগতির কারণে বর্তমানে এই সড়কে চলাচল করাটাই অসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের শিল্পনগরী বিসিক এলাকার প্রায় ৩ লাখ শ্রমিকের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিনিয়তই তাদের কাদামাটি আর দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।

Advertisement

কোনো কোনো সময় চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছেন অনেকে। একই সঙ্গে বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিপমেন্ট করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে অনেক সময় শ্রমিকদের সময় মতো বেতন-বোনাসও পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত সড়কটি খানাখন্দে ভরা। সড়কের বেহালদশার কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেক সময় রিকশা থেকে পড়ে আহত হচ্ছেন অনেকে। আবার সৃষ্টি হচ্ছে যানবাহনের ধীরগতি।

সেই সঙ্গে দ্বিতল সড়কে চলছে ডেক্সস্ল্যাব বসানোর কাজ। নিচে রাস্তা প্রশস্তকরণ হচ্ছে। কিন্তু নিচের সড়কে যাতায়াতের জন্য ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আর এতে করে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ গড়ে উঠবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম-সিলেট থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহন ঢাকার ভেতর দিয়ে না যেয়ে এ সড়কে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নে প্রথম ধাপে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। তখন ২০২৫ সালের ৩০ জুন নির্মাণকাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ ছিল। পরে সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করে।

১০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মুক্তারপুর-পঞ্চবটি সড়কে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৭ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক দুই লেন এবং তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হবে। পঞ্চবটি থেকে শীতলক্ষ্যা-৩ সেতু পর্যন্ত ২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৬টি র্যামসহ দুই লেন বিশিষ্ট ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (দ্বিতল সড়ক)।

এরমধ্যে পঞ্চবটি থেকে কাশিপুর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার এ্যাডগ্রেড সড়কের ওপর এবং কাশিপুর থেকে চর সৈয়দপুর পর্যন্ত ২ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার নিচু ভূমির ওপর দিয়ে যাবে। এছাড়া যানজট নিরসনে পঞ্চবটি মোড় থেকে ফতুল্লার দিকে ও নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার দিকে ৩শ ১০ মিটার করে ৬ লেন সড়ক নির্মাণ করা হবে। মুক্তারপুর সেতুর দক্ষিণপ্রান্তে ৪৪৩ মিটার এ্যাডগ্রেড সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হবে।

Advertisement

একই সঙ্গে চর সৈয়দপুরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু পয়েন্টে একটি গোলচত্বর থাকবে। নিচে ওপরে ২টি করে ৪টি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে এবং যানবাহনের ওজন পরিমাপের জন্য থাকবে ৬টি ওজন স্টেশন। নিচতলায় যান চলাচলের জন্য ফ্রি থাকলেও দোতালা সড়কে যাতায়াতে টোল পরিশোধ করতে হবে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের শিল্পনগরী ফতুল্লার বিসিক শিল্প এলাকায় প্রায় ৭ শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। একই সঙ্গে বিসিক থেকে মুক্তাপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। পাশাপাশি মুক্তারপুরে পাঁচটি সিমেন্ট কারখানাসহ ৬টি হিমাগার থাকায় মুক্তারপুর-পঞ্চবটি সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যাদের প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ বিসিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, যানজট ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি নারায়ণগঞ্জের সড়কগুলোতে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী ঘেঁষে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন সড়কের নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে যানজটের ব্যাপকতা আরও বেড়েছে। বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানিতে পণ্য ও কাপড় বোঝাই যানবাহন উল্টে পড়ে মালামাল নষ্ট হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে নিরাপদকে গুরুত্ব দিয়ে মানুষের চলাচলে ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। যাতে মালিক-শ্রমিকরা নিরাপদে তাদের কর্মস্থলে যেতে পারেন। রাস্তাঘাটে মানুষকে দুর্ভোগ দেওয়ার অধিকার নেই কর্তৃপক্ষের। এ ধরনের বড় প্রকল্পের কাজ হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় মানুষের চলাচলে যেন অসুবিধা না হয়। কিন্তু সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এমনিতেই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক শিল্পনগরীর রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা বর্তমানে রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তারপুর-পঞ্চবটি সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতালাকরণের কাজ হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার জন্য কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্যানডং লুকিয়াও গ্রুপ ও চায়না স্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্রার কো-অপারেশন গ্রুপ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করবে। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ অংশের গোপচর এলাকায় অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সেখানে কাজের গতি একটু কম। আশা করা যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য সড়কটি খুলে দেওয়া যাবে।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/জেডএইচ/এএসএম