কক্সবাজারের রামুতে সীমান্ত চোরাচালানের ডন হিসেবে খ্যাত ডাকাত শাহীন সহযোগীসহ সশস্ত্র অবস্থায় যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জাউছপাড়া এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
Advertisement
অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, ডাকাতির সরঞ্জাম ও ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। জব্দ অস্ত্রের মধ্যে তিনটি একনলা বন্দুক, একটি একে-২২ রাইফেল, ১০ রাউন্ড গুলি, চারটি কার্তুজ ও ১০টি দেশীয় ধারালো কিরিচ এবং ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।
একইদিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ধৃত শাহীনের গর্জনিয়াস্থ বাড়ির সামনে যৌথ প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি।
তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে শনাক্ত রফিকুল ইসলাম রিজভী ও বাবুল নামে আরও দুজন গ্রেফতার হয়েছেন। রিজভী নাইক্যছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টাল নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়। যৌথবাহিনীর অভিযানকালেও রিজভী শাহীনকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য ফোন দেন বলে তথ্য উঠে আসে।
Advertisement
যৌথবাহিনীর অভিযানে শাহীন ডাকাতের গ্রেফতারের খবরে পুরো সীমান্ত জুড়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
সেনাবাহিনী জানায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় গরু চোরাচালান বাড়া ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জনমনে শাহীন ডাকাতকে নিয়ে ভয় ও শঙ্কা বিরাজ করছিল। এর আগে, বারবার চেষ্টা করেও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। শাহীন ডাকাতকে ধরার জন্য সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি চালায়।
সবশেষ বুধবার রাতে তারা জানতে পারেন, শাহীন ডাকাত মাঝির কাটা এলাকায় নিজ বাসায় অবস্থান করবেন। পরে সকাল ৮টায় ১০ম পদাতিক ডিভিশনের ৪টি টহল দল সমন্বিতভাবে বিজিবির সহায়তায় ঝটিকা অপারেশন চালায়। অভিযানকালে সেনা টহল দল শাহীন ডাকাতের বাসভবনের চারদিকে কর্ডন করে। এ সময় কৌশলগত সুবিধাজনক তিনটি অবস্থানে সেনা টহল মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে শাহীন ডাকাত ও তার সহযোগীরা ভয় পেয় কয়েক রাউন্ড এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যৌথ বাহিনী তাকে কৌশলে ধরে ফেলে।
ব্রিফিংকালে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনীর ১০ম পদাতিক ডিভিশনের লে. কর্নেল মনোয়ার হোসেন, র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক কর্নেল কামরুল হাসান ও বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কফিল উদ্দিন। তারা অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
Advertisement
শাহীন ডাকাতের নামে ৮টি হত্যা ও গুম, ৩টি ডাকাতি, ৪টি মাদক, ২টি অপহরণ ও ৩টি অস্ত্র মামলাসহ সর্বমোট ২০টি মামলা রয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আসা চোরাই গরু, সিগারেট, ইয়াবা, আইসসহ অসংখ্য মাদক বাংলাদেশে প্রবেশ করাতেন শাহীন। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে চাল-ডাল-তেলসহ অনেক খাদ্যসামগ্রী মিয়ানমারে পাচার হতো। এসব নিয়ন্ত্রণে ছিল তার বিশাল সশস্ত্র বাহিনী।
এসএএল/এএমএ