লাইফস্টাইল

কাটা লাগা খ্যাত নায়িকার ছিল মৃগীরোগ, এটা কি প্রাণঘাতী?

কাটা লাগা খ্যাত নায়িকার ছিল মৃগীরোগ, এটা কি প্রাণঘাতী?

মৃগী বা এপিলেপ্সি নামটা শুনলেই অনেকে ঘাবড়ে যান। কেউ কেউ আবার ভাবেন এটি ছোঁয়াচে! কেউ ভাবেন এটি প্রাণঘাতী। সম্প্রতি এক বলিউড তারকার মৃত্যুতে অনেকেই ভাবছেন মৃগী রোগের কারণেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

Advertisement

শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে মাত্র ৪২ বছর বয়সে ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ নামে পরিচিত অভিনেত্রী ও মডেল শেফালী জারিওয়ালা, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যান। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, তিনি ১৫ বছর বয়স থেকেই মৃগী রোগে ভুগতেন।

মৃগী বা এপিলেপ্সি সাধারণত নিজে নিজে প্রাণঘাতী নয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না হলে বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে খিঁচুনি হলে এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। খিঁচুনি হলো মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণহীন সংকোচন, যা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে পাঁচ মিনিটের বেশি খিঁচুনি হলে তা বিপদজ্জনক।

তাহলে মৃগীরোগ আসলে কী?মৃগীরোগ বা এপিলেপ্সি আসলে একটি নিউরোলজিক্যাল কন্ডিশন, যার ফলে মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক তরঙ্গ তৈরি হয়, এবং সেজন্য বারবার খিঁচুনি বা সিজার হতে পারে। এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হলেও ঠিকঠাক চিকিৎসা, সচেতনতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে জীবন একেবারে স্বাভাবিকভাবেই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে খিঁচুনি বিষয়টি সাধারণত খুব মারাত্মক না হলেও, এটি কখন ও কোথায় হবে তা আগে থেকে বোঝা যায় না। এ কারণে খিঁচুনি থেকে বিপদ হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।

Advertisement

মৃগীরোগ যেভাবে প্রাণঘাতী হতে পারে-

১. স্টেটাস এপিলেপটিকাস বা দীর্ঘস্থায়ী খিঁচুনিযদি খিঁচুনি পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় বা একটার পর একটা হতে থাকে, তখন মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে এসময় রোগীর বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই পাঁচ মিনিটের বেশি খিঁচুনি হলে অতি দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।

২. সাডেন আনএক্সপ্লেইনড ডেথ ইন এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগীর হঠাৎ মৃত্যুকিছু ক্ষেত্রে মৃগীর রোগীরা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মারা যেতে পারেন। এটি খুবই বিরল ঘটনা, যার সম্ভাবনা এক শতাংশের মতো। তবুও একে হালকাভাবে নেওয়া যায় না।

৩. দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুমৃগীরোগের প্রধান লক্ষণই খিঁচুনি, যা সাধারণত কিছুক্ষণ পর একাই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু আগে থেকেই সতর্কতা না নিয়ে বিপদজ্জনত পরিস্থিতিতে খিচুনির প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। যেমন- খিঁচুনির সময় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়া, রান্নার সময় বা রাস্তা পার হওয়ার সময় খিঁচুনি হলে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সাঁতার কাটার সময় খিঁচুনিতে আক্রান্ত হলে রোগী ডুবে যেতে পারে ও খাওয়ার সময় খিঁচুনি হলে নিশ্বাস আটকেও মৃত্যু হতে পারে।

যেভাবে নিরাপদ থাকবেন-

এসব কারণে মৃগীর রোগীকে খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। একা একা অনেক ভিড়ের মধ্যে যাওয়া, একা সাঁতার কাটা ও আন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার মাধ্যমে নিরাপদ থাকতে হবে। চলুন জেনে নেই এই অসুখের ঝুঁকি ও তা থেকে সাবধান থাকার উপায়-

Advertisement

১. রাতে ঘুম না হলে খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

২. অতিরিক্ত স্ট্রেস, অতিরিক্ত উত্তেজনা বা ভয় খিঁচুনি ট্রিগার করতে পারে।

৩. ঝিলমিল আলো বা স্ট্রোব লাইট (যেমন, ডিস্কো লাইট) অনেকের জন্য বিপজ্জনক।

৪. নিয়মিত ওষুধ না খেলে খিঁচুনির ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

৬. পরপর একাধিক খিঁচুনি হলে তা গুরুতর ইঙ্গিত হতে পারে।

৭. খিঁচুনির সময় মাথায় আঘাত লাগলে তা থেকে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে।

৭. পানিতে খিঁচুনি শুরু হলে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই একা কখনো সাঁতার নয়।

এসব থেকে বাঁচতে দরকার সঠিক যত্ন আর ম্যানেজমেন্ট-

৮. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।

৯. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো জরুরি।

১০ মেডিটেশন, যোগ বা হালকা ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করতে পারে।

১১. ট্রিগার চিনে রাখা দরকার। কবে, কোন পরিবেশে খিঁচুনি হয়েছে তার ডায়েরি রাখতে পারেন।

১২. মেডিকেল আইডি সঙ্গে রাখুন। যারা একা চলাফেরা করেন, তারা মেডিকেল আইডি কার্ড বা ব্রেসলেট পরে রাখতে পারেন যাতে কেউ বিপদের সময় সাহায্য করতে পারে।

জানলে ভয় কমে, সহানুভূতি বাড়ে। এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ কোনো অভিশাপ নয়। এটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। সমাজে এখনও এ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, যেমন – খিঁচুনি হলে মুখে চামচ দিতে হবে, নাকের সামনে জুতা ধরতে হবে, জ্ঞান হারালে পানি ছিটাতে হবে – এসব একেবারেই ভুল। বরং মাথায় কিছু না দিয়ে তাকে পাশ করে শুইয়ে দিন, ঘাড়ের নিচে কিছু দিন যাতে আঘাত না লাগে, আর সময় নোট করুন। প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে নিন। মৃগী নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি প্রাণঘাতী না, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে আক্রান্তদের প্রয়োজন শুধু একটু বোঝাপড়া, আর একটু যত্ন।

এএমপি/জেআইএম