ফরিদপুরের মধুখালীতে এবার লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফলন মোটেও ভালো হয়নি। মূলত অনাবৃষ্টি ও টানা তাপপ্রবাহের কারণে এ ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
Advertisement
চাষিরা জানান, লিচুর ফুল ও মুকুল ঝরে পড়ায় আশানুরূপ ফল আসেনি। আকার ছোট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এবছর ফরিদপুরের লিচু বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। গতবার যে বাগানে সাত লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে, এবার একই বাগানে তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে কি-না আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার জাহাপুর গ্রামটি লিচুর জন্য বিখ্যাত। অনেকের কাছে এটি ‘লিচু গ্রাম’ নামেও পরিচিত। জাহাপুর গ্রামের প্রায় মানুষেরই লিচুর বাগান রয়েছে। অন্য ফসল উৎপাদন ছেড়ে দিয়ে এ গ্রামের সবাই লিচু চাষে ঝুঁকেছেন। লিচুগাছ-বাগান নেই, এমন একটিও বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটি বাড়ি কিংবা জমিতে রোপণ করা হয়েছে লিচুগাছ। গত ২৫ বছরে এ ইউনিয়নে লিচু চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে।
চাষিরা জানান, দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লিচু চাষ। কম খরচে অধিক মুনাফার আশায় প্রতি বছরই কৃষকরা ঝুঁকছেন এই চাষাবাদের দিকে। তবে উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের জাহাপুর, দোস্তরদিয়া, টেংরাকান্দি, মনোহরদিয়া, চর মনোহরদিয়া, খাড়াকান্দি ও মির্জাকান্দি গ্রামে ব্যাপকভাবে লিচুর চাষ হয়। মোজাফফরি জাতের পাশাপাশি গুটি, বোম্বাই এবং চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাষ বেশি হয় এসব এলাকায়। তবে এবার চরম ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
Advertisement
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, মধুখালী উপজেলার প্রায় শতাধিক বাগানে এবছর ৯৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে, যার মধ্যে শুধু জাহাপুরেই ৪০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে গড় ফলন হয়েছে ৪ দশমিক ১ টন। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে ৫-৭টি পূর্ণবয়স্ক লিচুগাছ থেকে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:
লিচু চাষে কৃষকদের করণীয় পাকা ও মিষ্টি লিচু চিনবেন যেভাবে দিনাজপুরে ২ হাজার কোটি টাকার লিচু উৎপাদনের আশানাটোর থেকে আসা মৌসুমি শ্রমিক শাওন জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন ১৫-২০টি গাছ থেকে গড়ে দুই হাজারের মতো লিচু সংগ্রহ করেন। দৈনিক মজুরি হিসেবে পান ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
স্থানীয় লিচু বাগানের মালিক আক্কাস আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত। এবারও একটি বাগান কিনেছি এক লাখ ৭২ হাজার টাকায়। লিচু চাষে ঝুঁকি আছে। তবে এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন সন্তোষজনক হয়নি। প্রতিটি লিচুর সংগ্রহমূল্য ৭০-৮০ পয়সা। তবে কীটনাশক, লেবার, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে গড়ে লিচুপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২ টাকা।’
Advertisement
জাহাপুর গ্রামের লিচু চাষি দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা জমিতে প্রায় ১৪০টি লিচুগাছ রয়েছে। সারা বছর বাগানে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। বর্তমানে ভালোমানের ১০০ লিচুর পাইকারি দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গত বছর আমার এ বাগান থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছিলাম। এবার সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা সম্ভব হবে।’
আরেক লিচু চাষি আব্দুর রাজ্জাক মৌলিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিচু চাষ লাভজনক। বেশি যত্ন নিতে হয়। তবে একবার বাগান তৈরি করলে কয়েক বছর ভালো ফলন পাওয়া যায়। অনেক কৃষক এখন ধান বা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে লিচু চাষে ঝুঁকছেন। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়নি।’
জাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, এবার তীব্র খরা ও আবহাওয়া ভালো না থাকায় লিচুর ফলন তেমন ভালো হয়নি। তুলনামূলক খরচ বেড়েছে। সবমিলিয়ে লিচু চাষিরা খুশি না।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব এলাহী বলেন, জাহাপুরের লিচু ফরিদপুর ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পুরোদমে লিচু সংগ্রহ শুরু হয় এবং জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকে। এবার অনাবৃষ্টিতে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। ফলনও বেশ কম হয়েছে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর পরিচর্যা এবং সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
এসআর/এমএস