ক্যাম্পাস

ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান

ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান

রাজধানীর শাহবাগে ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ও জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘জুলাইয়ের সব শক্তি’কে নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের জোটবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’।

Advertisement

রোববার (২৫ মে) রাজধানীর শাহবাগ সংলগ্ন জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেন তারা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্ল্যাটফর্মটির বিভিন্ন শরিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে স্থানটি জনসমাগমে পরিপূর্ণ হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শুরু হয় সমাবেশ।

সমাবেশে তারা ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’সহ নানা স্লোগান দেয়।

এ সময় তাদের হাতে ‘পেতে চায়লে মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’সহ নানা লেখা সংবলিত ফেস্টুন দেখা যায়।

Advertisement

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শরিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে আহত কয়েকজন আন্দোলনকারীকেও দেখা যায়।

এ সময় তারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য গঠন, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত, জুলাইযোদ্ধাদের নিরাপত্তা প্রদানসহ বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেন।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী প্রধান উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে বলেন, ইউনূস সাহেব যতক্ষণ বাংলাদেশের পক্ষে আছেন, সরকারে যারা বাংলাদেশপন্থি আছেন তাদের বাংলাদেশের স্বার্থে টিকিয়ে রাখায় আমাদের জুলাইয়ের শপথ। বাংলাদেশের জুলাই বেঁচে থাকতে আর একটা এক-এগারো হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত জুলাই ঘোষণাপত্র আসবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত জুলাই গণহত্যার বিচার হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জুলাই চলছে, জুলাই চলবে।

Advertisement

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, গত ১৬ বছরে হাসিনা ভারতের প্রেসক্রিপশনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ, সংস্কৃত, সকল প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার করেছে। আলেম ওলামাদের হত্যা করেছে, দেলোওয়ার হোসেন সাঈদী থেকে শুরু করে শাপলায় আমাদের হাজার হাজার আলেম ওলামাকে হত্যা করেছে।

অনৈক্য সৃষ্টির কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জুলাইয়ের পর আমাদের স্বপ্ন ছিল একটা ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে তাদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। কিন্তু জুলাইয়ের কিছু ঠিকাদার সেই ঐক্য বিনষ্ট করেছে।

জুলাইয়ে আলেম ওলামাদের অবদান উল্লেখ করে সাদিক বলেন, এই জুলাইয়ের ঠিকাদাররা আমাদের আলেম ওলামাদের বঞ্চিত করেছে, আমাদের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভাইবোনদের বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করেছে। এর মাধ্যমে অনৈক্য তৈরি করেছে।

এ সময় তিনি বলেন, আমাদের মূল দাবি হলো আওয়ামী লীগের গত ষোলো বছর ও জুলাইয়ের হত্যার বিচার করতে হবে এবং যে প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে তা পুনঃসংস্কার করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা যদি জুলাইকে ধারণ না করেন, শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করেন তাহলে খুনি হাসিনার যে পরিণতি হয়েছিলো সেই পরিণতি আপনাদেরও হবে।

রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী হাসান জুনায়েদ আইন উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন করে বলেন, গণহত্যার বিচারের দাবিতে আপনি কি স্টেপ নিয়েছেন। খুনিরা জামিন পেয়ে যায়, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর আমাদের আহত ভাইদের শহীদের তালিকা লম্বা হয়। আইন উপদেষ্টা আপনাকে জবাব দিতে হবে।

জুলাইযোদ্ধাদের নিরাপত্তার গ্যারেন্টি চাই। অনলাইন এবং অফলাইনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হুমকির বিপরীতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই। জুলাইয়ের মাধ্যমে আমরা দিল্লির আধিপত্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছি। যে কোনো ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যের বাংলাদেশে কোনো জায়গা নেই। জুলাইযোদ্ধারা ফ্যাসিবাদ এবং আধিপত্যবাদকে বিতাড়িত করে ছাড়বেই।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন, জনগণ আপনাদের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ম্যান্ডেট দিয়েছিলো তাহলে কেন আবার জনগণকে আন্দোলনে নামতে হলো। কেন আপনারা এখনো আওয়ামী লীগের বিচার করতে পারছেন না?

তিনি অভিযোগ করেন, একটি পক্ষ জুলাইয়ের সমস্ত শক্তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে কিছু কথিত মাস্টারমাইন্ডের পরামর্শে তারা সরকার পরিচালনা করতে চেয়েছিলো। আমরা দেখলাম তাদের ব্যর্থতা। আগে দেখেছি, যারা আওয়ামী লীগ হয়ে করেছে তারা হয়ে গেছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। আর ২৪ এর অভ্যুত্থানের পর দেখছি, নতুন বন্দোবস্তের নামে একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি তারা জুলাইয়ের শক্তি হতে পারবে না। ধিক্কার জানাই।

সরকার জুলাইয়ে সবার অবদান স্বীকার করেনি দাবি করে রাশেদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে এখানে প্রত্যেকের অবদান রয়েছে। সরকার আমাদের অবদান স্বীকার করেনি। যদি সরকার অবদান স্বীকার করতো, সেভাবে সরকার গঠন করতো তাহলে এই অনৈক্য দেখতে হত না।

শহীদ নিয়াজের বাবা আব্দুর রব বলেন, যাত্রাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে আমার ছেলের বুক ঝাঁজরা হয়ে গেছে। ইউনূস সাহেব আপনাকে বলতে চাই, শহীদের রক্তের ওপর আপনাকে আমরা ওই চেয়ারে বসিয়েছি তাই আপনার প্রথম কাজ, জুলাই স্বীকৃতি ঘোষণা করা। দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে গণহত্যায় জড়িত খুনিদের বিচার করা।

এফএআর/এমআরএম/জিকেএস