কৃষি ও প্রকৃতি

কৃষিতে রপ্তানি বাড়াতে তরুণদের সম্পৃক্ততা, সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

কৃষিতে রপ্তানি বাড়াতে তরুণদের সম্পৃক্ততা, সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে শাক-সবজি, ফুল ও ফলের বাজার। ২০২৪-২৫ (জুলাই- মার্চ) অর্থবছরে বাংলাদেশ শাক-সবজি রপ্তানি করে আয় করেছে ৫৫.৬ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ফল ও ফুল রপ্তানি করে আয় করেছে ৩৯.১ মিলিয়ন ডলার।

Advertisement

সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন কাঠামো ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের তুলনায় এ খাতে রপ্তানিতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থায় রপ্তানি বাড়াতে তরুণদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ততা বাড়ানো, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব ও সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

রোববার (২৫ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ কৃষি সম্মেলন ২০২৫: বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলকতা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের কৃষি সম্ভাবনা’ শীর্ষক সম্মেলনে এক উপস্থাপনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সাসটেইনবেল এগ্রিকালচার ফাউন্ডেশন (এসএএফ) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম. এ. সাত্তার মন্ডল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডি.এ.ই) মহাপরিচালক মো. সাইফুল আলম, কৃষি বিপণন বিভাগের আওতাধীন স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কমপেটিটিভনেস প্রজেক্টের ডেপুটি সেক্রেটারি ড. মো. রাজু আহমেদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মেদ মনসুর ও এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা।

Advertisement

‘বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে রপ্তানির সম্ভাবনা, সুযোগ, চ্যালেঞ্জ ও ব্র্যান্ডিং কৌশল’ শীর্ষক উপস্থাপনাটি তুলে ধরেন লাইটক্যাসল পার্টনার্সের গ্রোথ ও ইনোভেশন বিভাগের লিড শুভম রায়। উপস্থাপনায় বলা হয়, সামগ্রিকভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশের উৎপাদিত শাক-সবজির ২০ থেকে ৪৪ শতাংশ অপচয় হওয়া। এই অপচয়ের কারণে বছরে বাংলাদেশ ২.৪ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

অপচয় ছাড়া আরও যেসব কারণে রপ্তানি কম হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে: মধ্যস্বত্বভোগীদের দীর্ঘসূত্রিতা, কম মুনাফা হওয়া, শিপমেইন্টে বিলম্ব হওয়া, গুদামজাত করার জন্য পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকা, সার্টিফিকেশনকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং অত্যধিক হারে বিমান পরিবহন প্রিমিয়াম। একমাত্র সাগর পথের চেয়ে বিমান পরিবহন প্রিমিয়াম ৩০-৫০ শতাংশ বেশি ও উৎপাদন কাঠামোর দুর্বলতার কারণে রপ্তানির আগেই ২০-৩৫ শতাংশ ফল ও শাক-সবজি নষ্ট হয়ে যায়।

কৃষিখাতে রপ্তানি বাড়াতে করণীয় ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে ১০০ জনের অধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা পর্বটিকে তিনটি সেশনে ভাগ করা হয়। প্রথম সেশনটি সঞ্চালনা করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিজন ইসলাম, দ্বিতীয়টি সঞ্চালনা করেন এসএএফ এর প্রোগ্রাম ডেভলপমেন্ট এর পরিচালক মো. আব্দুর রউফ, এবং তৃতীয়টি সঞ্চালনা করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্সের পরিচালক জাহেদুল আমিন।

Advertisement

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান উদ্বোধনী ভাষণে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৃষি ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘এগ্রিকালচার ফিউচার আউটলুক প্ল্যান ২০২৫’ তৈরি করা হচ্ছে, যা আধুনিক প্রযুক্তিকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আসন্ন ‘খামারি অ্যাপ’, যেখানে কৃষকরা শস্য ব্যবস্থাপনা ও তাৎক্ষণিক বাজার তথ্য পাবেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও এমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম. এ. সাত্তার মন্ডল বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ কাঁচির মতো দ্বিমুখী-যেখানে একদিকে ১.৫ কোটি অতিরিক্ত মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, অন্যদিকে খণ্ডিত কৃষিজমি উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে। তিনি উদ্ভাবনের মাধ্যমে এসব কাঠামোগত সমস্যা মোকাবেলার আহ্বান জানান।

দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় নারীদের ক্ষমতায়ন ও কৃষিখাতের উন্নয়নে তরুণদের সম্পৃক্তা নিয়ে আরও একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এতে অর্থায়ন বাড়াতে নারী ও যুবদের জন্য উদ্ভাবনী মডেল, উদ্যোক্তা তৈরি ও বাজারে প্রবেশগম্যতার জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা, উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ এবং তরুণদের সফলতার গল্প তুলে আনার সুপারিশ করা হয়।

তৃতীয় প্যানেল আলোচনায় প্রোটিন ও দুধ উৎপাদনে খাদ্য নিরাপত্তা, ও কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নীতি, বাজারজাত করার জন্য পরিবহনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং এআই-এর মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোকে কাজে লাগানোর তাগিদ দেন আলোচকরা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জুলাই-মার্চ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষিখাত থেকে ৮২১.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৭৭৩.০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ওই সময়ের তুলনায় ৬.২১ শতাংশ হারে বেড়েছে। এই সময়ে মোট রপ্তানির ২.২১ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি। মোট শ্রম শক্তির ৩৬.৯ শতাংশ যোগান দিয়ে থাকে এই খাত।

এনএইচ/জেএইচ/জিকেএস