জাগো জবস

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার কেমন?

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার কেমন?
 

বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিভিল। এই টেকনোলজি ছাড়া আধুনিক উন্নয়ন কল্পনা করা অসম্ভব। ফলে বিশ্বজুড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় আগ্রহীদের পছন্দের তালিকায় থাকে এই টেকনোলজি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কী? এই টেকনোলজির কাজ কী? এই বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে? এ ছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন—

Advertisement

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?

সিভিল হলো ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার প্রাচীন ও অন্যতম শাখা। এর বাংলা হচ্ছে পুরকৌশল বিদ্যা। সবচেয়ে পুরাতন, বড় এবং সব প্রকৌশল জ্ঞানের সমন্বয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। এই টেকনোলজিকে প্রকৌশল জ্ঞানের জননী বলা হয়ে থাকে।

পড়ার বিষয়

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার বিষয় অনেক বিস্তৃত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—কাঠামোবিদ্যা, বস্তুবিদ্যা, ভূবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, মাটি, জলবিজ্ঞান, পরিবেশবিদ্যা, বলবিদ্যা এবং বিজ্ঞানের আরও শাখা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই টেকনোলজির পরিসর বড় হওয়ার কারণে অনেক শাখাও বের হয়েছে। তা হচ্ছে—স্ট্রাকচারাল, এনভায়রনমেন্টাল, জিওটেকনিক্যাল, ট্রান্সপোর্টেশন, ওয়াটার রিসোর্স, আরবান প্লানিং, কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ

কোনো প্রকল্পের নকশা, ব্যবস্থাপনা, গঠন, নির্মাণ তদারকি, পরিকল্পনা ইত্যাদি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান কাজ। ব্যক্তিগত বাড়ি, আবাসন প্রকল্প, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামত, বাঁধ নির্মাণ, কলকারখানা নির্মাণ, বন্দর নির্মাণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও করেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা।

Advertisement

এরোস্পেস শিল্পে, জেট লাইনার এবং স্পেস স্টেশন ডিজাইন, অটোমোবাইল শিল্প, চেসিসের লোড বহনক্ষমতা নিখুঁতকরণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পাওয়ার ইন্ডাস্ট্রি এবং যে কোনো শিল্প, যেখানে নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ হয়; সেখানেও এই টেকনোলজির অবদান আছে। এ ছাড়া নতুন নির্মাণসামগ্রী ও কৌশল উদ্ভাবন করে থাকেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা।

শাখাসমূহ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান শাখা সাতটি। সেসব শাখার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো— স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বাড়ি, হোটেল, পার্ক, ব্রিজ, বিল্ডিং ইত্যাদির ওপরে নিজস্ব ভার বা বাইরের ভার প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ বাতাস, পানি, ভূমিকম্প, তাপমাত্রা ইত্যাদির প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য সিমেন্ট, বালি, রি-ইনফোর্সমেন্ট, কাঠ, অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে সঠিক ডিজাইন করাই এ শাখার কাজ।

এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বর্জ্য, মল ইত্যাদি অপসারণ এবং বিশুদ্ধ করাই এ শাখার কাজ।

জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

মাটি বা পাথরের ওপর স্ট্রাকচারের প্রভাব এবং এদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে শাখাটি। ভূগর্ভের সিপেজ, ভূমিকম্পের প্রভাব, স্থিতিশীলতা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয়। এ ছাড়া বাঁধ, রিটেইনিং ওয়াল, ফাউন্ডেশন ইত্যাদির আংশিক ডিজাইনও এ শাখার কাজ।

Advertisement

ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং

বন্যা, কারখানার সেচের পানি সরবরাহ, নদীভাঙন রোধ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং ডিজাইন করা হয়। হাইড্রলিক পাওয়ার, বাঁধ, খাল, পানি ধস ইত্যাদি নিয়ে এ শাখায় কাজ করা হয়।

আরও পড়ুন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভবিষ্যৎ কেমন?  কৌশলে পড়াশোনা করলে বিসিএস জয় করা সম্ভব  ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

মানুষ, মালামাল ইত্যাদি পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা, ডিজাইন, সমস্যা, সমাধান নিয়ে কাজ করে এ শাখা। অল্প রাস্তায় বেশি পরিবহন সুবিধা, দুর্ঘটনা কমানো, খরচ বাঁচানো ইত্যাদি নিয়েও কাজ করা হয় এ শাখায়।

কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং

অর্থের ব্যবহার, সময়ের সংক্ষেপণ, প্রয়োজনীয় মালামাল ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদির জোগান, কাঠামো গঠনের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হয় এ শাখায়।

আরবান প্লানিং

এ শাখায় নগরায়ন এবং শহর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হয়। এ জন্য কী কী করতে হবে এবং কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করা হয়।

কর্মসংস্থান কোথায়

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেমন-

সরকারি

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি), সিটি করপোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস। এ ছাড়া মৎস্য অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎ কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রভৃতি।

বেসরকারি

রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, কনস্ট্রাকশন ফার্ম, কনসালটেন্সি ফার্ম, পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। এ ছাড়া অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে—যেখানে এই টেকনোলজির ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ আছে। অনেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করতে পারেন।

অন্য ক্যারিয়ার

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। উন্নত দেশগুলোয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ও কর্মক্ষেত্র ব্যাপক। ফলে বিদেশেও ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব।

কারা পড়বেন

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার জন্য গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এ ছাড়া নকশা ও মডেলিংয়ের কাজে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। স্বপ্ন যাদের দেশ গড়ার; তাদের জন্য এই টেকনোলজি।

কোথায় পড়বেন

যদি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। ডিপ্লোমা শেষে সরকারিভাবে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) বিএসসি করার সুযোগ আছে। দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিএসসি করা যাবে।

এসইউ/জিকেএস