অথি সাহা জনতা ব্যাংকের ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে স্নাতক এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তার ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প এবং নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
Advertisement
জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—অথি সাহা: বাগেরহাট জেলার ষাটগম্বজ ইউনিয়নের রণভূমি গ্রামে জন্ম হলেও বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে ওঠা বাগেরহাট শহরে। শৈশবে বাবার মতো একজন মানুষ হওয়ার ইচ্ছাই ছিল। বাবা ছিলেন আমার জীবনের আইডল। মিডল ক্লাস ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের নিয়েও বাবার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া।
জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন—অথি সাহা: বাগেরহাট গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। তারপর শুরু হয় নতুন ভর্তিযুদ্ধ। একের পর এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও মেলেনি সফলতা। তারপর ভর্তি হই খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। স্নাতক পাসের পরে ২০২০ সালে স্নাতকোত্তরের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কোভিডের জন্য পাস করতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। ২০২২ সালের অক্টোবরে স্নাতকোত্তর পাস করি। এরপর ২ মাস পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রাইমারির সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।
জাগো নিউজ: চাকরি পাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল?অথি সাহা: আগের পরীক্ষাগুলোয় অনেক ভালো রিটেন হওয়ার পরেও চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হইনি। তাই ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হবো, এটা ছিল চিন্তার বাইরে। সবচেয়ে বেশি খুশির বিষয় ছিল আমার বাবাও একই ব্যাংকে, একই পোস্টে চাকরি করতেন।
Advertisement
জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?অথি সাহা: চাকরির প্রিপারেশন নেওয়ার শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল আমি বাবার মতো ব্যাংকার হবো। বাবাই আমার ব্যাংকার হওয়ার অনুপ্রেরণা। প্রাইমারি প্রশ্ন প্যাটার্ন সম্পর্কে সত্যি বলতে আমার তেমন ধারণাই ছিল না। আমি শুরু থেকেও ব্যাংকের জন্য পড়ছিলাম এবং ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা দিইনি। তা-ও বাবার ইচ্ছায় প্রাইমারিতে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় প্রাইমারিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যাই। তবে ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখার ইতি টানিনি।
আরও পড়ুন
দ্রুত সফলতার কোনো শর্টকাট নেই: সিহাব সাদমান প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বিজেএস জয়জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই—অথি সাহা: চাকরির প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য আমার পরিবারের সাথে খুলনায় থাকি এবং আমার স্কুল খুলনা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা যাতায়াত করতে হতো। পাশাপাশি সাত ঘণ্টা স্কুল করে এসে পড়াশোনা করা ছিল নিত্যদিনের রুটিন। সুযোগ পেলেই স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বাসে বা ভ্যানে পড়ে নিতাম। বাসায় এসে একটু রেস্ট নিয়েই পড়তে বসেছি। সেসময় যতটা সময় পাওয়া যায় পড়ার জন্যই ব্যয় করেছি। মাঝে মাঝে পাবলিক বাসে বসে পড়াতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতাম। তবুও চেষ্টা করতাম বাসে আর ভ্যানে বসে মুখস্থ পড়াগুলো শেষ করার। যাওয়ার পথে ইংরেজি ভোকাব্যুলারি, বাংলা আর আসার পথে জিকে আর কম্পিউটার মোটামুটি পড়ে ফেলতাম। অবশেষে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এবং পরিবারের এত এত সার্পোটের জন্য সফলতার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাই।
জাগো নিউজ: সফলতার পেছনে সব সময় কারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন? অথি সাহা: এককথায় বাবা, মা, দাদা এবং ছোট বোন। সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা ছিল আমার বোনের। ব্যাংকে একের পরে এক এক্সাম দিই। কিন্তু চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে পারতেছিলাম না। বোনই প্রায় প্রতিদিন আমাকে বোঝাতেন, পড়া ধরে দিতেন এবং সব সময় বলতেন, ‘তুই না পারলে কে পারবে বল?’ তাছাড়া প্রতি পরীক্ষায় আমার মা প্রায় একটানা ৫-৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। পরীক্ষা দিয়ে বের হলে জিজ্ঞেস করতেন না আমি পরীক্ষা কেমন দিয়েছি। মা বলতেন, ‘আমি জানি তুমি অনেক পরিশ্রম করেছো, তোমার পরীক্ষা ভালো হবেই।’ পৃথিবীতে মা-ই একমাত্র মানুষ, যার আমার প্রতি বিশাল বিশ্বাস ছিল। তাছাড়া দেশের বাইরে থেকে দাদা সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন। মানসিকভাবে আমার পরিবারের সবাই অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন।
Advertisement
জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পেতে কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?অথি সাহা: প্রচুর প্রচুর পড়তে হবে। প্রিলি এবং রিটেন একসাথে পড়তে হবে। কারণ প্রিলির রেজাল্টের অল্প দিনের ভেতর রিটেন হয়। বেশ ভালো করে একটা বই একাধিকবার পড়তে হবে এবং একই বিষয়ের বেশ কিছু বই পড়তে হবে। ডায়েরি মেইনটেইন করলে ভালো হয়। আমি ডায়েরি মেইনটেইন করতাম। রোজ কী কী পড়তে হবে, তা আগের দিনই ঠিক করে রাখতাম। বিগত প্রশ্ন বিশ্নেষণ করে সেই অনুযায়ী পরীক্ষায় আসার উপযুক্ত ক্ষেত্র সিলেকশন করতে হবে। নিজের উইক জোন বুঝে সেই জায়গাগুলোতে বেশি ইফোর্ট দিতে হবে। যে কোনো বিষয় নিয়ে বাংলা এবং ইংরেজিতে বানিয়ে লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং ব্যর্থতাই আপনাকে সফলতা এনে দেবে। বার বার পরাজয় মেনে নিয়েও শূন্য থেকে শুরু করার সাহস রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘পরাজয়ে ডরে না বীর’।
এসইউ/এমএস