জাগো জবস

বিশ্বের চারজনের একজন বাংলাদেশের মীম

বিশ্বের চারজনের একজন বাংলাদেশের মীম

মুমতাহিনা করিম মীম চট্টগ্রামের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে নানা ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কাপাসগোলা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। স্কুলজীবন থেকেই বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতেন। সেভাবে নিয়েছেন প্রস্তুতিও। এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করেন। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাড়া পেয়েছেন। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হেনড্রিক্স কলেজের ‘হ্যাস মেমোরিয়াল বৃত্তি’ পেয়েছেন। যা বিশ্বের মাত্র চারজনকে দেওয়া হয়। আন্ডার গ্র্যাজুয়েটে পড়বেন কম্পিউটার সায়েন্স (ডুয়েল-ইঞ্জিনিয়ারিং) প্রোগ্রামে।

Advertisement

তার যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—মুমতাহিনা করিম মীম: আমার শৈশব কেটেছে সমুদ্র আর পাহাড়ের শহর চট্টগ্রামে। ছোটবেলার দিনগুলোয় নানা কৌতূহল আর সৃষ্টিশীল খেলার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। তখন থেকেই নানা কল্পনায় ভেসে বেড়াতাম। কখনো বিজ্ঞানী, কখনো শিল্পী, আবার কখনো নভোচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। পরিবার সব সময় চেয়েছে আমি নিজের পথ নিজে গড়ি। সেখানেই ছিল সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতাম। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভালো ফলাফল অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিই।

জাগো নিউজ: আপনার কিছু সহশিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে বলবেন?মুমতাহিনা করিম মীম: সহশিক্ষা কার্যক্রম আমার পরিচয়ের বড় অংশ। ছোটবেলা থেকেই বিতর্ক, চিত্রাঙ্কন, গান, প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছি। আমার স্কুলে একটি প্রোগ্রামিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, যেখানে আমি নিজেই শিক্ষার্থীদের শেখাতাম।

Advertisement

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার স্বপ্ন দেখলেন কখন থেকে?মুমতাহিনা করিম মীম: ছোটবেলায় একবার বাবা-মায়ের সাথে বিদেশ সফরে গিয়েছিলাম। তখন মা সেখানের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়ে বলেছিলেন, চেষ্টা করলে এমন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমিও পড়তে পারবে। এরপর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অনেকের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম; যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভ করছেন। সে সময়ই বুঝেছিলাম, আমি বড় পরিসরে কিছু করতে চাই। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সেখানের বৈচিত্র্য, গবেষণার সুযোগ ও উদ্ভাবনী পরিবেশ আমাকে খুব টানতো।

জাগো নিউজ: হেনড্রিক্স কলেজে পড়ার গল্প শুনতে চাই—প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছিলেন?মুমতাহিনা করিম মীম: প্রথমে নিজের অ্যাপ্লিকেশন গুছিয়ে কমন অ্যাপের মাধ্যমে হেনড্রিক্স কলেজে আবেদন করি। পাশাপাশি ইংরেজি দক্ষতার টেস্টসহ প্রয়োজনীয় স্কোর সাবমিট করি। ১৫ ফেব্রুয়ারি হেনড্রিক্স কলেজের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ‘হ্যাস মেমোরিয়াল বৃত্তি’তে আবেদনের জন্য ইনভাইট করে। স্কলারশিপের জন্য আলাদা একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হয় এবং এসে (রচনা) লিখতে হয়। যেখানে লিডারশিপ, সমাজে ইতিবাচক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হয়।

আরও পড়ুন দ্রুত সফলতার কোনো শর্টকাট নেই: সিহাব সাদমান  চাকরি ছেড়ে প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সপ্তম কামরুল 

স্কলারশিপে আবেদন করতে কলেজের আবেদন জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আলাদা ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়। সিলেক্টেড ফাইনালিস্টদের একটি কঠিন ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেখানে আমার চিন্তাধারা, সমাজে প্রভাব ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যগুলো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ৩ মার্চ আমাকে আলাদাভাবে জুম মিটিংয়ে জানানো হয় মনোনীত হয়েছি। ‘হ্যাস মেমোরিয়াল বৃত্তি’ পাওয়া আমার জন্য অসাধারণ অর্জন। বৃত্তি এবং অফার লেটার পাওয়ার মুহূর্তটা ছিল সত্যিই অসাধারণ। হেনড্রিক্স কলেজে চলতি বছরের অগাস্ট থেকেই ক্লাস শুরু হবে।

জাগো নিউজ: বৃত্তিটি বছরে বিশ্বের চারজনকে দেওয়া হয়। এর ফাইনালিস্ট হিসেবে অনুভূতি কেমন ছিল?মুমতাহিনা করিম মীম: এ বৃত্তির জন্য মনোনীত হওয়াটা ছিল স্বপ্নের মতো। শুধু নিজের নয় বরং দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারার অনুভূতি ছিল অসাধারণ। এটি আমার আত্মবিশ্বাস অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতের লক্ষ্য আরও দৃঢ় করেছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য আবেদনের পদ্ধতি কী? প্রয়োজনীয় কী কী কাগজপত্র লাগে?মুমতাহিনা করিম মীম: যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত কমন অ্যাপ বা কোয়ালিশন অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করে। আবেদনকারীকে পার্সোনাল এসে, এসএটি/এসিটির মত স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্টের স্কোর রিপোর্ট, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস, কোনো অর্জন বা পুরস্কার উল্লেখ করার পাশাপাশি রিকমেন্ডেশন লেটার, অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দিতে হয়। এ ছাড়া কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনকারীর প্রোফাইল যাচাইয়ের জন্য ভার্চুয়াল ইন্টারভিউ বা ভিডিও সাবমিশনও দাবি করে। মূলত আবেদনটিকে অ্যাকাডেমিক রেকর্ড, পার্সোনাল এসে, রিকমেন্ডেশন লেটার, ইংরেজি দক্ষতার প্রমান, এক্সট্রাকারিকুলার কার্যক্রম, অর্জনসহ সবকিছুর ওপর ভিত্তি করে ‘হলিস্টিক্যালি’ মূল্যায়ন করা হয়।

জাগো নিউজ: হ্যাস মেমোরিয়াল বৃত্তিতে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়?মুমতাহিনা করিম মীম: এ বৃত্তিতে পুরো প্রোগ্রামের টিউশন ফি, থাকা এবং খাওয়ার খরচ কভার করা হয়। প্রতি বছরে ৫৪ হাজার ডলার করে দেওয়া হয়। সেই হিসেবে চার বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে কাজ করার সুযোগ থাকবে। যা অভিজ্ঞতা অর্জনের দারুণ একটি উপায়।

জাগো নিউজ: যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে চান; তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?মুমতাহিনা করিম মীম: যারা যুক্তরাষ্ট্রে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পড়তে আগ্রহী; তাদের জন্য প্রথম ও সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো নিজেকে সময়মতো প্রস্তুত করা। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং ধাপে ধাপে সাজানো। তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা না থাকলে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রথমেই শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ফলাফলের দিকে মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি টিওইএফএল, আইইএলটিএস বা ডুয়োলিঙ্গ ইংলিশ টেস্টের মতো ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় ভালো স্কোর অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এসএটি বা এসিটি পরীক্ষার স্কোরও চায়। তাই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চান, তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভালোভাবে দেখা জরুরি। ভালো অ্যাকাডেমিকসের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম, সমাজসেবামূলক কাজ, বিভিন্ন অর্জন, লিডারশিপ এক্সপেরিয়েন্স—এসব কিছু মিলিয়েই তৈরি হয় একটি শক্তিশালী প্রোফাইল। কমন অ্যাপের মতো অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন করা যায়। যেখানে প্রয়োজন হয় কাউন্সিলর এবং অন্যান্য শিক্ষকের রিকমেন্ডেশন লেটার, নির্দিষ্ট প্রম্পটে লেখা পার্সোনাল এসে এবং অন্যান্য তথ্য। এত কিছুর মধ্যেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়জ্ঞান। প্রতিটি ধাপের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। তাই ক্যালেন্ডার ধরে কাজ করা খুবই জরুরি। সবশেষে যারা সত্যিই স্বপ্ন দেখে, তারা ভয় না পেয়ে পরিশ্রম, ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলে সীমান্ত পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।

এসইউ/জিকেএস