খেলাধুলা

ক্রিকেটের ইতিহাস বদলে দেয়া ফাস্ট বোলার হ্যাডলির জন্মদিন

ক্রিকেটের ইতিহাস বদলে দেয়া ফাস্ট বোলার হ্যাডলির জন্মদিন

নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির জন্মদিন আজ। ১৯৫১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ক্রিকেটের ইতিহাসকে বদলে দেয়ার মত কৃতিত্ব যে ক’জন ক্রিকেটার অর্জন করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম স্যার রিচার্ড হ্যাডলি।

Advertisement

একটা সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট একটা জনপ্রিয় কিংবা বৈশ্বিক মঞ্চে কোনো শক্তিধর হিসেবে বিবেচনায়ও আসতো না তারা। মোটামুটি মানের একটি দুর্বল দলকে বিশ্বের অন্যতম সেরার আসনে, বিশেষ করে টেস্টে, বসিয়েছিলেন রিচার্ড হ্যাডলি। মুত্তিয়া মুরালিধরনের আসার আগ পর্যন্ত একটি দুর্বল দলের হয়ে এতটা অবদান রাখার রেকর্ড আর কোনো বোলারের ছিল না।

হ্যাডলির এমন সাফল্য কিভাবে এসেছিল? তার নিজের প্রাকৃতিক প্রতিভার পাশাপাশি অধ্যাবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে। ফাস্ট বোলিংয়ের প্রতিটি সূক্ষ্ম দিকে অতুলনীয় দখল ছিল তার। ৮৬ টেস্টে ৪৩১টি উইকেটই তার দক্ষতার প্রমাণ।

তবে রিচার্ড হ্যাডলির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ছিল ১৯৮৫-৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে। নিউজিল্যান্ড তখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কখনও টেস্ট জেতেনি, এমনকি সম্মানজনক অবস্থানও অর্জন করতে পারেনি।

Advertisement

কিন্তু হ্যাডলি প্রথম ইনিংসে ৯/৫২ এবং ম্যাচে মোট ১৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ ধ্বংস করে দেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার সুযোগ ছিল তার হাতে, কিন্তু তিনি একটি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে ভন ব্রাউনের প্রথম টেস্ট উইকেট নিশ্চিত করেন। এই নিঃস্বার্থ কাজটিকে ফ্রাঙ্ক কিটিং ‘শতাব্দীর ক্যাচ’ হিসেবে অভিহিত করেন।

বোলিংয়ের পাশাপাশি হ্যাডলি ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত ছিলেন। টেল এন্ডে তিনি আক্রমণাত্মক ও বিপজ্জনক ব্যাটিং করতেন। ৮৬ টেস্টে ২৭.১৬ গড়ে ৩১২৪ রান করেন তিনি। সেঞ্চুরি রয়েছে দুটি, হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে ১৫টি। হ্যাডলির এই অসাধারণ অবদান ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

১৯৮০: হরভজন সিংয়ের জন্মদিন আজ

আজ, ৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ভারতের অন্যতম সেরা স্পিনার হরভজন সিং। ক্যারিয়ারে তিনি যতই অর্জন করুক না কেন, ২০০১ সালের মার্চ মাসে ১১টি অসাধারণ দিনের সাফল্যকে কখনও ভুলতে পারবেন না তিনি।

Advertisement

ভারত ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ০-১ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় হরভজনের কব্জির মোচড়ে স্বাগতিকরা ঘুরে দাঁড়ায়। ভারত ওই সিরিজ জয় করে ২-১ ব্যবধানে। যার মূল চালিকাশক্তি ছিলেন হরভজন।

ওই সিরিজে তিনি ৩২টি উইকেট নেন, যার মধ্যে ছিল ভারতের প্রথম টেস্ট হ্যাটট্রিকও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মুহূর্তগুলো এনে দিয়েছে। ভারতের মাটিতে রিকি পন্টিংয়ের ব্যর্থতার জন্য এককভাবে দায়ী ছিলেন হরভজন।

কিন্তু ২০০৮ সালে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের সঙ্গে তার সংঘর্ষ ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি কুৎসিত বিতর্ক সৃষ্টি করে। তাকে প্রথমে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যা আপিলের পর কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। একই বছর তিনি শ্রীশান্তকে চড় মারার জন্য পুরো আইপিএল মৌসুম থেকে নিষিদ্ধ হন।

২০০৮ সালে অনিল কুম্বলের অবসরের পর হরভজন সিংই ভারতের স্পিন আক্রমণের মূল দায়িত্ব পান। কিন্তু ফর্ম হারানো এবং তরুণ স্পিনারদের উত্থানের কারণে ২০১১ সালে ইংল্যান্ড সফরের পর তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবরে তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি শিরোপা জিতান; কিন্তু ভারতের হয়ে তার খেলার সুযোগ ক্রমশ কমে যায়। পরবর্তী চার বছরে তিনি মাত্র পাঁচটি টেস্ট খেলেন।

১৯৮৪: গর্ডন গ্রিনিজের অবিশ্বাস্য ইনিংস

ক্রিকেটের একটি চিরন্তন সত্য হলো, গর্ডন গ্রিনিজ দুই পায়ে ছিলেন মারাত্মক, আর একপায়ে অপ্রতিরোধ্য। আজকের এই দিনে (৩ জুলাই) লর্ডসে তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয় এনে দেন। যেখানে তিনি অপরাজিত ২১৪ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন।

ইংল্যান্ড ৭৮ ওভারে ৩৪২ রানের লক্ষ্য বেধে দিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ৬৬.১ ওভারে রীতিমতো ঝড়ো গতিতে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের একমাত্র উইকেটটি পড়ে ডেসমন্ড হেইন্সের। যেটা কোনো বোলার পায়নি। কারণ হেইন্স হয়েছিলেন রানআউট। যেটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাত টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম উইকেট।

গ্রিনিজ মাত্র ২৪২ বল মোকাবেলা করে ২৯টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কার সাহায্যে ২১৪ রানের এই অবিশ্বাস্য ইনিংসটি খেলেন। উইজডেন ক্রিকেট মান্থলিতে স্কাইল্ড বেরি লিখেছেন, ‘(গ্রিনিজ) এটিকে সাউদাম্পটনের সানডে লিগের একটি রোমাঞ্চকর খেলার মতো করে তুলেছিলেন।’

১৯৯৯: ২১ বাউন্ডারিতে ৯৯

এজবাস্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংলিশ ক্রিকেটার অ্যালেক্স টিউডর খেলেন ৯৯ রানের বিখ্যাত এক ইনিংস। তিনি ছিলেন অপরাজিত। বিখ্যাত বলার কারণ হলো, এই ইনিংসটি খেলতে ২১টি বাউন্ডারি মারেন অ্যালেক্স টিউডর। যা ছিল তার মোট রানের ৮৫ ভাগ। বারবার কভারের মধ্য দিয়ে ক্রিম বাউন্ডারে ছুঁড়ে মারছিলেন।

তবে টিউডরের চিরকালিন আক্ষেপ হয়ে থাকবেন গ্রাহাম থর্প। শেষ মুহূর্তে টিউডরকে সুযোগ না দিয়ে তিনি একাই ব্যাটিং করে রান তুলে ফেলেন। যার ফলে একটি মাত্র রানের জন্য সেঞ্চুরিটা করতে পারেননি টিউডর। সে সঙ্গে সেঞ্চুরি করা প্রথম নাইটওয়াচম্যান হিসেবে রেকর্ডবুকে নাম লেখানো থেকে বঞ্চিত করেন। থর্প ২১ বলে ২১ রান করে অপরাজিত থাকেন।

অথচ ইংল্যান্ডের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। প্রথম ইনিংসে এক পর্যায়ে ৭ উইকেটে ছিল ৪৫ রান। অলআউট হয় ১২৬ রানে। তবে কয়েক ঘণ্টা পরে নিউজিল্যান্ডও একই পরিস্থিতির শিকার হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫২ রান করে তারা। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন হয় ২০৮ রান। এ পরিস্থিতিতে কেউ আশা করেনি টিউডরের মত একজন ব্যাটারের হাতে কিউইদের পরাজিত হতে হবে। দুঃখজনক বিষয় হলো টিউডর এরপর দুই বছর টেস্টই খেলতে পারেননি।

২০১৮: অ্যারন ফিঞ্চের ব্যাটে ঝড়

অ্যারন ফিঞ্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৮ সালের এই দিনে ৭৬ বলে ১৭২ রান করে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন। আগের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও ছিল ফিঞ্চের, ১৫৬ রানের। তার চেয়ে ১৬ রান বেশি করে পুরনো রেকর্ড ভেঙে ফেলেন।

আইএইচএস/