আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে চাকরি পেয়েছেন। তিনি জাংগালিয়া ইউনিয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে বিবিএ এবং এমবিএ পাস করেন।
Advertisement
সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—আব্দুল্লাহ আল মামুন: ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দত্তেরবাজার ইউনিয়নের বারইগাঁও গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। আমার গ্রামের শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে শৈশবের কিছু সময় গ্রামে কাটানোর পর ভালো শিক্ষার সুযোগের জন্য পরিবার আমাকে বাড়ির বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের গ্রাম থেকে আমার এক চাচাতো বোন প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার গৌরব অর্জন করেন। আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। মূলত এখান থেকেই আমার বাবার আমাকে ভালো পড়াশোনা করানোর আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু আমার কৃষক বাবার পক্ষে আমাকে ভালো কোনো শহরে রেখে পড়াশোনা করানোর সামর্থ ছিল না। সেসময় আমার বড় ফুফু এগিয়ে আসেন। আমার ফুপা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মূলত তাদের বাসায় থেকেই আমি শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করি।
জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে শুনতে চাই—আব্দুল্লাহ আল মামুন: আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয় জাংগালিয়া ইউনিয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। যেখানে আমি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষার সময় একটি দুর্ঘটনার কারণে হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল না আসায় জিপিএ ফাইভ অর্জন করতে পারিনি। ৪.৭৫ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাস করি। পরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকেই জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। উচ্চশিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ে পড়ার সুযোগ পাই। পরিবারের কাছে থাকার সুবিধার্থে আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখান থেকে ৩.৭১ সিজিপিএ নিয়ে বিবিএ ও ৩.৭৯ সিজিপিএ নিয়ে এমবিএ সম্পন্ন করি।
Advertisement
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?আব্দুল্লাহ আল মামুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন আমাদের একজন প্রিয় শিক্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরির সুযোগ-সুবিধা এবং সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেন। সেখান থেকেই মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখা শুরু করি।
আরও পড়ুন প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বিজেএস জয় জানার জন্য প্রচুর পড়তে হবে, মুখস্থ করার জন্য নয়জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?আব্দুল্লাহ আল মামুন: আমি ২০২০ সালের শেষের দিকে স্পেসিফিক ভাবে বললে ২১ ডিসেম্বর তারিখ থেকে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না থাকায় পুরো প্রস্তুতিটাই ছিল নিজের প্রচেষ্টার ফল। কিছু বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা শুরু করি। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত টিউশন করে রাত ১১টার পর পড়তে বসতাম এবং ফজরের নামাজের আগে পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম। আমার বিশ্বাস ছিল, কত ঘণ্টা পড়ছি তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কতটুকু সময় মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। কারো ১ ঘণ্টা করে ৭ দিন পড়া, আর কারো ১ দিনেই ৭ ঘণ্টা পড়ার ফলাফল কিন্তু প্রায় সমানই আসবে। আমি প্রতিদিন কত সময় পড়তাম; সেটা একটা নোটখাতায় লিখে রাখতাম। ফলে আমার পড়াশোনার সময় বা ফাঁকিবাজি সব নিজেই দেখতে পেতাম। প্রতিদিন পড়াশোনা শুরু করতাম অন্তত ৩০-৪০ মিনিট ভোকাব্যুলারি পড়ার মধ্য দিয়ে। শেষ করতাম অন্তত ১ ঘণ্টা ম্যাথ করার মাধ্যমে। পাশাপাশি রেশনিং করে প্রতিদিন অন্তত যে কোনো ৩টি বিষয় পড়ার চেষ্টা করতাম। দিনের যে কোনো ১ ঘণ্টা প্রিভিয়াস প্রশ্ন সলভ করতাম। আমার নোটখাতায় রাখা হিসেব অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে অন্তত সাড়ে চার ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। প্রস্তুতি নেওয়ার তিন মাসের মধ্যেই আমি ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসিতে প্রবেশনারি অফিসার (পিও) হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। এরপর একে একে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমটিও, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পিও, কৃষি ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির এমটিও এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার (জেনারেল) পদে চাকরি পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন ছিল?আব্দুল্লাহ আল মামুন: আমার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) হওয়া। আমি পরপর দুবার এ পদের ভাইভা দিলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। ফলে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়ি। ফলশ্রুতিতে পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও অনুভূতিটা আসলে সেরকম ছিল না।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে সব সময় কারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?আব্দুল্লাহ আল মামুন: এ পথচলায় আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে মানসিক ও আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। তাদের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
Advertisement
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেতে নতুনরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?আব্দুল্লাহ আল মামুন: বর্তমানে ব্যাংক ও বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন প্যাটার্নে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তাই কেউ যদি বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি ইংরেজি ভোকাবুলারি ও গণিতের ওপর বাড়তি মনোযোগ দেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সেক্রেটারিয়েন্ট (বিএসসিএস) কর্তৃক নেওয়া যে কোনো পরীক্ষায় ভালো ফল করা সম্ভব।
জাগো নিউজ: এই পেশায় থেকে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?আব্দুল্লাহ আল মামুন: আমি এখনো নিজেকে প্রস্তুতির মধ্যে রেখেছি। কারণ আমার লক্ষ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) হওয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যতে অর্থনীতি বিষয়ক যে কোনো সাবজেক্টে দেশের বাইরে থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনাও আছে।
এসইউ/এএসএম