দেশজুড়ে

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া নিয়ে হট্টগোল

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া নিয়ে হট্টগোল

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডার মধ্য দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এসময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফ্যাসিস্টের দোসর বলে আখ্যা দেন এক বিএনপি নেতা।

Advertisement

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে সাদুল্লাপুর বহুমুখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ষবরণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে হাইস্কুল মাঠে সমাবেশস্থলে অংশ নেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকতা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাজানো হয় জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ এসো এসো গান। কোনো বার্তা না দিয়ে শুধু উপজেলা প্রশাসনের কর্মকতা-কর্মচারীরা এই জাতীয় সংগীতে অংশ নেন। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছাড়াও মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেওয়া থেকে বাদ পড়েন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে প্রতিবাদ জানালে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায়ের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দেন বিএনপি নেতা আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন।

Advertisement

এসময় মাইক্রোফোনে সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, প্রশাসন ইচ্ছেমতো জাতীয় সংগীত গাইছে। এমনটি হতে পারে না। মাঠে উপস্থিত কেউ জাতীয় সংগীত গাইবেন না। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফ্যাসিস্টদের দোসর বলে আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তিনি।

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর বহুমুখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনশাদ আলী সরকার বলেন, মাঠে সমাবেশস্থলে অংশগ্রহণকারী সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নিয়ম। কিন্তু মাঠের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্যরা যখন অপেক্ষা করছে ঠিক তখনেই মাঠের পূর্ব পাশে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাসহ উপস্থিত লোকজনের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

সাদুল্লাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জেলা তাঁতীদলের আহ্বায়ক আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, মাঠে কোনো ধরনের বার্তা না দিয়ে আমাদের সবাইকে অবজ্ঞা করে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে সঞ্চালকের কাছে মাইক্রোফোন নিয়ে প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসনের ইচ্ছেমতো জাতীয় সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। ফ্যাসিস্ট মুক্ত এবারের বর্ষবরণ সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপিত হয়েছে। তবে এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসর অনেক কর্মকর্তা নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। সময় এসেছে এই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

মাঠে থাকা সাদুল্লাপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহমদুল হক মিলন জানান, প্রশাসনের হঠকারিতায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটির সার্বজনীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এতে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া উপস্থিত সকলে প্রতিবাদ করেন। যদিও পরবর্তীতে উপস্থিত সবার অংশগ্রহণে দ্বিতীয়বার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

Advertisement

এবার বর্ষবরণ উদযাপনে উপজেলা প্রশাসনের সংকুচিত অনুষ্ঠানের আয়োজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুধী মহলসহ অনেকে। বর্ষবরণ উপলক্ষে কোনো আলোচনা সভা রাখা হয়নি। শুধু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও অডিটরিয়াম হল রুমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বরাদ্দকৃত অর্থের স্বল্পতার জন্য সংকুচিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বরাদ্দের টাকায় নিজেদের জন্য বৈশাখি পোশাক (পাঞ্জাবী, গামছা) কিনেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম বলেন, মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হলেও তাৎক্ষণিক তা সমাধান হয়েছে। পরে উপস্থিত সবাই মিলে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বাজেট স্বল্পতার কারণে সীমিত পরিসরে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরাদ্দের অর্থ অনুষ্ঠানের আয়োজনেই ব্যয় করা হয়েছে।

এ এইচ শামীম/এমএন/জিকেএস