একুশে বইমেলা

বইয়ের শিরোনামে চৈত্রমাস

বইয়ের শিরোনামে চৈত্রমাস

বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলা বারো মাসের মধ্যে নানা কারণে চৈত্রমাস উল্লেখযোগ্য। এটি বছরের শেষ মাস হিসেবে পরিচিত। মাসটি বিভিন্ন ভাবে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক এবং গানে উঠে এসেছে। আমরা আজ খুঁজে নিয়েছি এমন কিছু বই; যেসব বইয়ের শিরোনামে চৈত্রমাস পেয়েছি।

Advertisement

চৈতালী-ঘূর্ণিকথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত উপন্যাস ‘চৈতালী-ঘূর্ণি’। ২০১৮ সালে প্রকাশনীর ১ম সংস্করণ প্রকাশ করে মাটিগন্ধা। এ ছাড়াও বইটি প্রকাশ করেছে কবি প্রকাশনী। বইটির মলাট মূল্য ২০০ টাকা। বাংলার চিরায়ত গ্রামীণ জনপদের শোষিত মানুষের আখ্যান এটি। কলকারখানার মজুরের মার খাওয়ার উপকথা। খেটে খাওয়া চাষার ভূমি হারিয়ে মজুর হওয়ার চিরায়ত গল্প। খরায় ক্ষেতে ফসল হয় না। স্ত্রী দামিনী আর অসুস্থ সন্তানের ভরণ-পোষণের বোঝা বওয়া দরিদ্র গোষ্ঠের কাছে বড্ড কঠিন হয়ে ওঠে। খাজনা দেওয়ার পয়সা নেই। অসুখে ছেলের চিকিৎসার সামর্থ্য নেই। মহাজনের ধার শোধ করার ক্ষমতা নেই। শুধু নেই আর নেই। লেখকের ভাষায়, ‘শ্মশানের পরই খান তিরিশেক মাঠ, তাহার পর গ্রাম। গ্রামের প্রান্তে শ্মশানটা, যেন জীবনের রাজ্যে মরণের অভিযান; পল্লীটার দ্বারপ্রান্ত অবরোধ করিয়া যেন মরণের কটকথানা বসাইয়াছে। মাঠের ফসল শ্মশানের প্রান্ত পর্যন্ত জাগিয়া উঠে, কিন্তু নীচে শুষ্ক নদীর টানে মাঠের রসটুকু চোঁয়াইয়া ওই রাক্ষসী বালুকা-প্রবাহের বুকে মিশিয়া যায়।’

চৈত্রের দ্বিতীয় দিবসনন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সমকালীন উপন্যাস ‘চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস’। অনন্যা প্রকাশনী প্রকাশিত বইটির মূল্য ৩০০ টাকা। এখানে দেখা যায়, খুব বৃষ্টি হচ্ছে। শর্মিলাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রায় হাঁটু পানি। আশেপাশে কোন চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে না। যেখানে বসে চা খেতে খেতে এই বাড়ির দিকে লক্ষ্য রাখা যায়। নান্টু পানি ভেঙে এগোচ্ছে। যে ভদ্রলোক শর্মিলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন তার কি আজ এ বাড়িতে নিমন্ত্রণ? তিনি ফুল নিয়ে এসেছেন। টেবিলে গোলাপ ফুলের তোড়া। অতিথিরা আজকাল নিমন্ত্রণে ফুল নিয়ে আসেন। তার মতো বেকুবরা যায় রসমালাইয়ের হাড়ি নিয়ে।

সেদিন চৈত্রমাস হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি সমকালীন উপন্যাস ‘সেদিন চৈত্রমাস’। ২০১৫ সালে বইটির ৮ম মুদ্রণ প্রকাশ করে অনন্যা। ১২৬ পৃষ্ঠার বইটির মলাট মূল্য ২৫০ টাকা। বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা হলো- ‘মীরা সুন্দর করে সেজেছে। চোখে কাজল দিয়েছে। কাজল নামের কালো রঙ কি করে চোখে এত সুন্দর করে কে জানে। মেয়েরা উৎসব উপলক্ষে নতুন শাড়ি পরতে পছন্দ করে। বেচারী একটা পুরনো শাড়ি পরেছে। জন্মদিনের কথা শফিকের কিছুই মনে নেই। মনে থাকলে একটা শাড়ি, কিছু ফুল নিয়ে যেতো।’

Advertisement

আরও পড়ুন মেঘনার মেয়ে: প্রেমের কবিতায় যাত্রা জিওগ্রাফিকা: ঐতিহ্য পর্যটনের নতুন দিগন্ত

চৈত্রের ভালোবাসানির্মলেন্দু গুণের কবিতার বই ‘চৈত্রের ভালোবাসা’। নির্মলেন্দু গুণ দেশের প্রধান কবিদের মধ্যে অন্যতম। মানব জীবনের প্রেম দ্রোহ হতাশা ব্যর্থতা নিয়ে তার ‘চৈত্রের ভালোবাসা’ কবিতার বইটি। কবিতাগুলো প্রেমার্ত হৃদয়ের কথা বলে। পাঠকের মনে ছন্দ মাত্রার এক ইন্দ্রজাল তৈরি করে। নির্মল আনন্দ খুঁজে পাওয়া যাবে কবিতাগুলোয়।

চিত্ত চিরে চৈত্রমাসলেখক মম সাহার (বিষাদিনী) সমকালীন উপন্যাস ‘চিত্ত চিরে চৈত্রমাস’। বইটি প্রকাশ করেছে নবকথন প্রকাশনী। মুদ্রিত মূল্য রাখা হয়েছে ৫২০ টাকা। লেখকের ভাষায়, ‘বাহার ভাই চিত্রার বিছানা খানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। মেয়েটাকে আপাদমস্তক পরখ করে নরম স্বরে প্রশ্ন করলেন, ‘কেমন আছো, রঙ্গনা?’ অসময়ে অদ্ভুত প্রশ্ন যেন বাহার ভাইয়ের মুখেই মানায়। ভোঁতা যন্ত্রণা নিয়ে বিষাদ হেসে চিত্রা উত্তর দিলো, ‘আমি তো সব সময়ই ভালো থাকি।’ ‘তা, ঘুমাওনি কেন?’বাহার ভাইয়ের প্রশ্নে চিত্রার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। মানুষটাকে বিব্রতবোধ করাতে বলে উঠল, ‘আপনার অপেক্ষায়।’ বাহার ভাই হাসলেন। খুব সহজে হাসেন না লোকটা। হয়তো হাসেন কিন্তু চিত্রাদের বাড়ির মানুষ কখনো দেখেনি সেই হাসি। চিত্রা যে যন্ত্রণার মাঝেও ঠাট্টা করছে, ব্যাপারটা বেশ লাগল বাহার ভাইয়ের।’

সেদিন চৈত্রের দুপুরতানজিল মীমের লেখা ই-বুক ‘সেদিন চৈত্রের দুপুর’। বইটি প্রকাশ করেছে বইটই। বইটি ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের ভাষায়, ‘এক অনাকাঙ্ক্ষিত মেয়েলি কণ্ঠ কানে আসতেই থেমে গেল রেহান। চৈত্রের এই কাঠফাটা রোদের দুপুরের ভিড়ে মাঝরাস্তায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। কিন্তু সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। কারণ রেহানের চোখে চশমা নেই। রেহানের একটা সমস্যা হলো সে চশমা ছাড়া চোখে দেখে না। একেবারে দেখে না এমনটা নয়। ঘোলা দেখে। পুরোটাই অপরিষ্কার আর কি। কতক্ষণ আগে রাস্তা পার হতে গিয়ে কার যেন গায়ে লেগে চশমা পড়ে গেছে। এতক্ষণ সেটাই নিচে বসে খুঁজতে ছিল রেহান।’

প্রিয় চৈত্রমাসআসরিফা সুলতানা জেবার রোমান্টিক উপন্যাস ‘প্রিয় চৈত্রমাস’। বইটি প্রকাশ করেছে নবকথন প্রকাশনী। ২০২৩ সালে প্রকাশিত বইটির মলাট মূল্য ৩৮০ টাকা। লেখকের ভাষায়, ‘গম্ভীরমুখো রাজপুত্রকে তেড়ে আসতে দেখে চৈত্রিকা অশ্রুসিক্ত টলমল চক্ষু মেলে এক পলক চাইল। বুকে ধুপধাপ কম্পন অনুভব করল। পা দুটো গুটিয়ে পুরাতন দেয়ালের সাথে আরেকটু সেঁটে বসল। বলিষ্ঠদেহী সাফারাত অর্থ্যাৎ তার কথিত রাজপুত্রের ধূসর রঙের জ্বলজ্বল করা মণিজোড়ায় বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে অপারগ হলো সে। নজর সরিয়ে আনল তৎক্ষণাৎ। তাকায় অন্যত্র। পায়ে স্পর্শ অনুভব হতেই আঁতকে ওঠে, সর্বাঙ্গে বয়ে যায় শিহরণ।’

Advertisement

এসইউ/এএসএম