লাইফস্টাইল

সারা মাস রোজা রেখে হাঁপিয়ে উঠেছেন?

সারা মাস রোজা রেখে হাঁপিয়ে উঠেছেন?

রমজান মাসের শেষ সপ্তাহে এসে কি আপনি ক্লান্ত বোধ করছেন? করাটাই স্বাভাবিক। ২৪টি রোজা হয়ে গেলো, রোজাদার ব্যক্তিদের অনেকেই নানানরকম শারীরিক সমস্যা বোধ করছেন এখন। তার মধ্যে অন্যতম হলো পানিশূন্যতা। এছাড়াও আছে শারীরিক ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা, ঈদযাত্রার মানসিক চাপ, পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, শারীরিক দুর্বলতা, ভিটামিন ও পুষ্টিজনিত ঘাটতির বিভিন্ন লক্ষণ।

Advertisement

আপাতদৃষ্টিতে সমস্যাগুলো খুব গুরুতর মনে না হলেও এগুলোর দিকে খেয়াল করা প্রয়োজন। দ্রুত সমাধান না করলে দীর্ঘমেয়াদে এসব ছোটখাট সমস্যা থেকে বড় সমস্যার আবির্ভাব ঘটতে পারে। আবার এসব সমস্যা থেকে যে প্রতিদিনের জীবনযাপনে অসুবিধা তৈরি হয়, তা বলাই বাহুল্য।

তবে শুরুতেই সতর্ক হয়ে গেলে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সহজেই এড়ানো সম্ভব। জেনে নিন রমজান শেষে কীভাবে জীবনকে আবার ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনবেন-

১. পানিশূন্যতা: লম্বা সময় ধরে শরীর পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ার ফলে শরীরে অবসাদ তৈরি হয়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় পেশী দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম করার মতো উপসর্গ। অনেকের সাধারণ মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের ব্যথা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এ সবই পানিশূন্যতার লক্ষণ। ডাইরিয়ার মতো কারণে হঠাৎ করে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ওরাল স্যালাইন তাৎক্ষণিক উপকার দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হওয়া পানিশূন্যতা সমাধানে একটু ধৈর্য ধরে পারিকল্পনা করে আগানো ভালো। একসঙ্গে অনেক পানি বা পনীয় পান করে ফেলা এখানে আপনার শরীরের প্রয়োজন মেটাতে পারবেনা, বরং অতিরিক্ত পানি কিডনির ওপর চাপ তৈরি করবে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করা শুরু করুন। যেমন, ডাবের পানি, চিনি ছাড়া শরবত ও নানান রকম ডিটক্স পানীয়। রসালো ফল খান। প্রতিদিন টেবিলে সবজি ও মুরগির স্যুপ জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করুন। শরীরের প্রয়োজন বুঝে ওরাল স্যালাইন ও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক পান করুন।

Advertisement

আরও পড়ুন চিনিছাড়া তৈরি করতে পারেন যে ৫টি স্বাস্থ্যকর পানীয় ইফতারে রাখুন মজাদার ডাবের স্মুদি

২. শারীরিক ক্লান্তি, অবসাদ ও খিটখিটে মেজাজ খুব কমন একটা বিষয় এ সময়ে। বিশেষ করে পরিবারের সেসব অভিভাবক যারা অফিস-বাসা সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের বাকিদের খেয়াল রেখে চলেছেন। তাই পরিবারের বাকিদের এখন আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রমজানের এই শেষ সপ্তাহটি যেন সবাই একসঙ্গে সুস্থভাবে শেষ করতে পারে তাই প্রত্যেকের বিশ্রাম ও খাবারে প্রতি পরিবারের সবার মনোযোগী হতে হবে।

৩. পেটের সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিক: একে একে বিভিন্ন জায়গায় ইফতারের দাওয়াত থাকে রমজানের এই সময়টায়। ভাজাপোড়া ও ভারি খাবার খেয়ে গ্যাসের ও হজমের সমস্যা হয় অনেকের। এ সমস্যা এড়ানোর একমাত্র উপায় খাবার বেছে খাওয়া। যেসব খাবারে আপনার অস্বস্তি তৈরি হয়, অনুরোধের ঢেকি গিলে তা খাবের না। বরং কাছের মানুষদের আগে থেকে জানিয়ে দিন কোন খাবারগুলো আপনার হজমে সমস্যা হয়। প্রয়োজনে সঙ্গে বাড়িতে বানানো শরবত রাখতে পারেন। তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সঙ্গে রাখুন। মনে রাখবেন সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে শরীরের ক্ষতি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

৪. ক্লান্তি, দুর্বলতা ও ঘুমের সমস্যা: সেহরিতে ওঠার কারণে এই একটি মাস টানা ঘুম পূরণ হয়না রোজাদার ব্যক্তিদের, ফলে সারাদিন ক্লান্তি, অবসাদ, ঝিমুনির মতো সমস্যা হতে পারে। একটু দ্রুত বিছানায় যাওয়া চেষ্টা করুন যেন আপনার প্রয়োজনীয় ঘুম পূরণ হয়। রোজা শেষ হওয়ার পর পর যতো দ্রুত সম্ভব আপনার স্বাভাবিক লাইফস্টাইলে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রাখুন।

৫. ভিটামিন ও পুষ্টির ঘাটতি: খাবারে অনিয়ম হলে স্বভাবতই শরীরে নানান পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবও ঘটতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম ভিটামিন-ডি। শহরের জীবনে সূর্যালোকে থাকার সুযোগ এমনিতেই কম। তার ওপর রোজার সময় তৃষ্ণা থেকে বাঁচতে আমার আরও কম রোদে যাওয়ার চেষ্টা করি। ফলে শরীর ভিটামিন-ডি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস থেকে বঞ্চিত হয়। তাই এসময় অবসাদ ও ভিটামিনের অভাবজনিত অন্যান্য সমস্যাগুলোও দেখা দেয়। হিসেব করে এসব ঘাটতি পূরণ করার মতো খাদ্য গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।

Advertisement

পবিত্র রমজান মাসের ইবাদতে শরীরের ওপর কিছু চাপ পড়বে, এটা স্বাভাবিক, কিন্তু একটু সচেতন হয়ে পরিকল্পনা করলে এই বিষয়গুলো সমাধান করতে পারবেন নিজেই। তবে এ সমস্যাগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন ও অন্যকে সচেতন করুন।

এএমপি/এএসএম