দেশজুড়ে

মধুমতীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, আতঙ্কিত মানুষ

মধুমতীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, আতঙ্কিত মানুষ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতী নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী পাঁচ শতাধিক পরিবারের।

Advertisement

এরই মধ্যে ইকড়াইল গ্রামের একটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে রয়েছে মধুমতী নদী। যে কোনো সময় এটিও বিলীন হতে পারে। ভাঙনের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর, টিটা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিটা গ্রামে মধুমতি নদী তীরবর্তী প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচ গ্রামের ১০টি মসজিদ, একটি কলেজ, দুটি হাইস্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সাব পোস্ট অফিস, দুটি বড় হাট এবং ১০টি মাছ ও গবাদিপশুর খামার, কয়েকটি কাঁচা সড়ক, ঈদগাহ ও কবরস্থানসহ শত শত একর ফসলি জমি।

এলাকাবাসীর দাবি, স্বল্প সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে পাঁচটি গ্রামের সব কিছু ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

Advertisement

এদিকে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ. কে.এম রায়হানুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।

শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, নদী ভাঙনে গত কয়েকদিনে আমার ৪টি বসতঘরসহ ৬৮ শতাংশ জমি বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদীর পাড়ে অন্যর জমিতে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করছি। কিছু ফসলি জমি আছে, তাও কখন ভেঙে নদীগর্ভে হারিয়ে যায় এ দুশ্চিন্তায় আছি।

ওই এলাকার বাসিন্দা মো. নিজাম শেখ বলেন, ঘরবাড়ি-ভিটেমাটি হারিয়েছি। দুই একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। পরিবার নিয়েও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর, টিটা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিটা গ্রামের প্রায় শত শত পরিবার তাদের বসতঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

উপজেলার ইকড়াইল গ্রামের মনির হোসেন বলেন, ভাঙন রোধ না করলে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসাসহ অনেক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে।

Advertisement

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর চলতি বছরের ২৬ মে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের জন্য লিখিত আবেদন করা হয়। উপজেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার বলেন, নদীভাঙন স্থানে আলফাডাঙ্গা প্রশাসনের লোকজন নিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, নদীভাঙন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিদর্শন করা হয়। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

এন কে বি নয়ন/জেডএইচ/জিকেএস